প্রসঙ্গ হায়াতে মাসীহ: কাদিয়ানীদের কাছে কিছু প্রশ্ন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

 

   মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির ধোকা ও প্রবঞ্চনায় যারা প্রভাবিত, উলামায়ে কেরামের অব্যাহত চেষ্টা ছিল সাদামাটা ভাষায় বুঝিয়ে তাদেরকে কুফুরির এই চোরাবালি থেকে উদ্ধার করার। তারই ধারাবাহিকতায় এখানে আমরা কাদিয়ানি ভাইদের উদ্দেশে এমন কিছু প্রশ্ন করতে যাচ্ছি, যেগুলোর ওপর একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে হেদায়েতের পথ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করি। ইনশা আল্লাহ।

 

প্রথম প্রশ্ন

   মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি তার কিতাব ‘বারাহিনে আহমদিয়া’র চতুর্থ খন্ডে সুরা ‘সাফফ’ এর দশ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন, হযরত ঈসা আ. পৃথিবীতে পুনরাগমন করবেন।

তার নিজের ভাষায়,

   “অর্থ: ‘‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি আপন রাসুলকে সঠিক পথের দিশা ও সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন। (সুরা সাফফ ১০) এই আয়াতটি হযরত ঈসা আ. সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী যে, তিনি পৃথিবীতে সশরীরে পুনরাগমন করবেন এবং পৃথিবীতে রাজত্ব করবেন। আল্লাহ তায়ালা ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ বিজয়ী করার যে ওয়াদা করেছেন, তা হযরত ঈসা আ. এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। তিনি পুনরায় যখন পৃথিবীতে আগমন করবেন, প্রতিটি জনপদে ও ঘরে ঘরে ইসলাম পৌঁছে দেবেন।” -বারাহীনে আহমাদিয়া, রুহানী খাযায়েন ১/৫৯৩

মির্জা সাহেবের এই বক্তব্যটি গভীর মনোযোগের সঙ্গে পড়ার পর আমাদের শুধু এতটুকু বলুন, পবিত্র কোরআনের আলোকে হযরত ঈসা আ. এর পুনরাগমন সম্পর্কে তিনি যা লিখেছেন তা সত্য ছিল না মিথ্যা? সঠিক ছিল না ভুল?

 

***

১৮৯১ সাল পর্যন্ত মির্জা সাহেব বলে আসছিলেন হযরত ঈসা আ. পৃথিবীতে পুনরাগমন করবেন। তার পর তিনি বলতে আরম্ভ করলেন, না, হযরত ঈসা আ. এর মৃত্যু হয়ে গেছে। তিনি দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে আর আগমন করবেন না। মুসলমান এবং কাদিয়ানি উভয় পক্ষ একমত যে, মির্জা সাহেবের পরস্পর বিরোধী এই দুই বক্তব্যের একটি সত্য, অন্যটি মিথ্যা। তবে মুসলমানরা দাবি করে, প্রথম বক্তব্যটি(হযরত ঈসা আ. পৃথিবীতে পুনরাগমন করবেন) সত্য, আর দ্বিতীয়টা মিথ্যা। কিন্তু কাদিয়ানিদের দাবি হলো, না, প্রথমটাই মিথ্যা আর দ্বিতীয়টি হলো সত্য।

   মিথ্যা সংবাদ প্রদানকারীকে বলা হয় মিথ্যাবাদী। সুতরাং উভয় পক্ষের ঐক্যমত্যে প্রমাণিত হলো, মির্জা সাহেব ছিলেন মিথ্যাবাদী।

 

***

পাঠকবৃন্দ লক্ষ করেছেন, উভয় পক্ষের ঐক্যমত্যেই মির্জা সাহেবের মিথ্যাবাদী হওয়াটা প্রমাণিত হলো। এবার দেখা যাক কোন পক্ষ তাকে বড় মিথ্যাবাদী মনে করে।

   মুসলমানদের বক্তব্য, শুরু থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত জীবনের পঞ্চাশটা বছর তিনি সত্য বলেছিলেন। তবে শেষের দিকে নিজ হীন স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য সত্য পরিহার করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সতের বছর মিথ্যা বলেছিলেন। এর বিপরীতে কাদিয়ানিরা বলে, মির্জা সাহেব শুরু জীবনের পঞ্চাশটা বছরই মিথ্যা বলে আসছিলেন। শুধু শেষের সতের বছর তিনি সত্য বলেছিলেন।

সারকথা হলো মুসলমানদের নিকট তার সত্যবাদিতার সময় পঞ্চাশ বছর এবং মিথ্যাবাদিতার সময় সতের বছর। আর কাদিয়ানিদের নিকট মির্জা সাহেবের মিথ্যাবাদিতার যমানা পঞ্চাশ বছর এবং সত্যবাদিতার যমানা মাত্র সতের বছর। এখন আপনারাই বলুন, কোন পক্ষ মির্জা সাহেবকে বড় মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করে!

 

***

   মুসলমানদের দাবি, মির্জা সাহেব পঞ্চাশ বছর যাবৎ হযরত ঈসা আ. পৃথিবীতে পুনরাগমন করবেন’ বলে সত্য বলে আসছিলেন। তার পর শয়তান তাকে ধোকায় ফেলে দিল। শয়তানের ধোকায় পড়ে তিনি বলতে লাগলেন,‘হযরত ঈসা আ. দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার তাশরিফ আনবেন না’। এবং তিনি নিজেই সেই ঈসা হবার দাবি করে বসলেন। আর কাদিয়ানিদের দাবি,‘‘হযরত ঈসা আ. পৃথিবীতে পুনরাগমন করবেন’ বলে শুরুর পঞ্চাশ বছর তিনি মিথ্যা বলে আসছিলেন। অতপর এই পঞ্চাশ বছর যাবৎ মিথ্যা বলে আসা লোকটাকে আল্লাহ তায়ালা ‘মাসিহ’ বানিয়ে দিলেন। নাউযু বিল্লাহ। এটা কেমন কথা! আচ্ছা কারো যুক্তিতে কি এটা ধরে যে, পঞ্চাশ বছর ধরে মিথ্যা বলে আসা লোকটা হঠাৎ ‘মাসিহ’ হয়ে যাবে!

 

***

ওপরে আমরা জেনেছি মুসলমান ও কাদিয়ানি সম্প্রদায় উভয়ে একমত যে, মির্জা সাহেব মিথ্যাবাদী ছিলেন। এদিকে মির্জা সাহেবের দাবি হলো তিনি ‘প্রতিশ্রæত মাসিহ’। আর একথা বলাই বাহল্য যে, কোন মিথ্যাবাদী যদি ‘প্রতিশ্রæত মাসিহ’ হবার দাবি করে, তাহলে সে সত্যিকারের ‘প্রতিশ্রুত মাসিহ’ হবে না। সে হবে ‘মাসিহে কাজ্জাব’ তথা ‘মিথ্যাবাদী মাসিহ’। সুতরাং উভয় পক্ষের ঐক্যমত্যে প্রমাণিত হলো, মির্জা সাহেব হলেন মাসিহে কাজ্জাব তথা মাসিহ হবার মিথ্যে দাবীদার।

 

দ্বিতীয় প্রশ্ন

 মির্জা কাদিয়ানীর স্বলিখিত গ্রন্থ বারাহীনে আহমাদিয় তে লিখেছে, আমার ওপর প্রকাশ করা হয়েছে যে, আমি যেহেতু ঈসা আ. এর প্রথম জীবনের নমুনা, এবং তার সঙ্গে আমার যেহেতু পরিপূর্ণ সাদৃশ্য রয়েছে। এজন্য প্রথম থেকেই আল্লাহ তায়ালা তার এই ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে আমাকেও অন্তর্ভক্ত করে রেখেছেন। অর্থাৎ শারীরিক ও বাহ্যিকভাবে এই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিপাদ্য হলেন হযরত ঈসা আ.। আর আমি হলাম রুহানি তথা আধ্যাত্মিকভাবে তার অন্তর্ভূক্ত।

তার নিজের ভাষায়,

“আমাকে জানানো হয়েছে যে, দীনতা, বিনয়, আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা. অন্যকে অগ্রাধিকার. নিদর্শন-প্রাপ্তি সহ প্রভৃতি বিষয়ে আমি হলাম হযরত ঈসা আ. এর প্রথম জীবনের নমুনা। একটি হিরক-খÐের দুই টুকরো যেমন হুবহু এক, একটি গাছের দুটো ফল যেমন একেবারে অভিন্ন, তেমনি আমার ও হযরত ঈসা আ. এর স্বভাব আর ফিতরতও হুবহু এক ও অভিন্ন। আমাদের দুজনের মাঝে কোনই পার্থক্য নেই। ... তাছাড়া আমার ও তার মাঝে একটা দৃশ্যগত মিলও রয়েছে। আমার ও তার মাঝে যেহেতু পরিপূর্ণ মিল,তাই আল্লাহ তায়ালা তার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে আমাকেও অন্তর্ভূক্ত করেছেন। অর্থাৎ তিনি হলেন বাহ্যিকভাবে এই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিপাদ্য আর আমি হলাম আধ্যাত্মিক ভাবে তার অন্তর্ভূক্ত।” -বারাহীনে আহমাদিয়া, রুহানী খাযায়েন ১/৫৯৩

মির্জা সাহেব এখানে মোট চারটি দাবি করেছেন।

১.      তিনি হযরত ঈসা আ. এর প্রথম জীবনের নমুনা।

২.      ঈসা আ. এর সঙ্গে তার পরিপূর্ণ মিল রয়েছে।

৩.      শুরু থেকেই আল্লাহ তায়ালা ঈসা আ. সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে তাকে অন্তর্ভূক্ত করে রেখেছেন।

৪.      সুরা সাফফ এর দশ দশ নম্বর আয়াতে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, বাহ্যিকভাবে তার উদ্দেশ্য হলেন হযরত ঈসা আ.। আর রুহানিভাবে তিনিও তার মধ্যে শামিল।

মির্জা সাহেব যে বলেছেন, তাকে জানানো হয়েছেÑ মাসীহ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর মূল প্রতিপাদ্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। আর মির্যা সাহেব আধ্যাত্মিকভাবে তাতে শামিল রয়েছে) এখানে সহসা একটি প্রশ্ন উঠে আসে, এ বিষয়গুলো তাকে জানিয়েছে কে? আল্লাহ তায়ালা না-কি শয়তান? আল্লাহ তায়ালা জানালে তো এর ব্যতিক্রম সম্ভব ছিল না। তাহলে মানতেই হচ্ছে, এটা ‘শয়তানী ইলহাম’ ছিল।

 

তৃতীয় প্রশ্ন  

   এই একই কিতাবে মির্জা সাহেব নিজ ‘এলহামে’র উদ্ধৃতি দিয়ে আরো লিখেন, হযরত ঈসা আ. অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে পৃথিবীতে পুনরাগমন করবেন। আর মির্জা সাহেবের এই যুগ হলো ঈসা আ. এর সে-যুগের ভূমিকা স্বরূপ। যেমন এক আয়াতের ব্যাখ্যায়  তিনি লেখেন,

‘‘এই আয়াতে হযরত ঈসা আ. এর অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে পৃথিবীতে পুনরাগমের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা যদি কোমলতা ও নমনীয়তা থেকে মুখ ফিরিয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি ও নিদর্শনাবলির মাধ্যমে প্রকাশিত সত্যকে গ্রহণ না করে অবাধ্যই থেকে যায়, তাহলে এমন একটা যুগও আসবে যখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সঙ্গে কঠোরতা অবলম্বন করবেন। এবং স্বীয় প্রতাপ  ও পরাক্রমের প্রকাশ ঘটাবেন। তখন অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে হযরত ঈসা আ. অবতরণ করবেন। এবং পৃথিবীর প্রতিটি সড়ককেই কুফুরির জঞ্জাল ও আগাছা থেকে মুক্ত করবেন। তার যুগে অসত্য ও অন্যায় বলতে কিছুই থাকবে না। আল্লাহর জালাল গোমরাহির বালাখানাকে নিস্ত-নাবুদ করে দেবে। আর আমার এই যুগ হলো তার যুগের ভূমিকা স্বরূপ। অর্থাৎ তখন তিনি স্বীয় প্রতাপ ও পরাক্রমের মাধ্যমে কঠোরতা অবলম্বন করে মানুষের সামনে সত্য-পথ উন্মুক্ত করে দেবেন। কিন্তু এখন তিনি দয়া ও নরমির সঙ্গে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি ও নিদর্শনাবলির মাধ্যমে তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন।’’ -বারাহীনে আহমাদিয়া, রুহানী খাযায়েন ১/৬০১-৬০২

    এই দীর্ঘ বক্তব্যের মধ্যে মির্জা সাহেব দুটো কথা বলেছেন,

১.      হযরত ঈসা আ. অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন।

২.      মির্জা সাহেবের যুগ তার যুগের জন্য ভূমিকা স্বরূপ।

এখন প্রশ্ন হলো ইলহামের মাধ্যমে প্রাপ্ত মির্জা সাহেবের এই দুটি দাবি সত্য ছিল না মিথ্যা?

 

চতুর্থ প্রশ্ন 

 মির্জা সাহেব ‘বারাহিনে আহমদিয়া’তে লিখেছিলেন, হযরত ঈসা আ. পৃথিবীতে পুনরাগমন করবেন। দলিল হিসেবে পবিত্র কোরআনের কিছু আয়াত উল্লেখ করেছেন এবং নিজের কিছু এলহামের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। যেমনটি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রশ্নে মির্জা সাহেবের বক্তব্য পাঠক পড়ে এসেছেন। কিন্তু ‘এজাজে আহমদিয়া’তে তিনি লেখেন, ‘বারাহিনে আহমদিয়া’তে ঈসা আ. এর পুনরাগমনের যে আকিদা আমি লিখেছি সেটা ওহীর ওপর ভিত্তি করে লিখিনি।

বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,

“তারা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন বানিয়ে রেখেছে। যেমন তারা বলে থাকে, প্রতিশ্রæত মাসিহ দাবি করার পূর্বে তো ‘বারাহিনে আহমদিয়া’তে আপনি ঈসা আ. এর পুনরাগমনরে কথা স্বীকার করেছিলেন। (এখন আবার অস্বীকার করছেন কেন?) ওহে বোকার দল শুধু-শুধু নিজেদের আমলনামা কেন খারাপ করছো! আমার সে স্বীকারোক্তির মধ্যে কোথায় লেখা আছে যে, আমি এগুলো খোদার ওহীর ওপর ভিত্তি করে লিখেছি? আর আমি কি কখনও দাবি করেছি আমি গায়েব জানি?’ -এ‘জাযে আহমাদী, রুহানী খাযায়েন ১৯/১১২-১১৩

এখন প্রশ্ন হলো, ‘বারাহিনে আহমদিয়া’তে পবিত্র কোরআনের যে সকল আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে এবং মির্জা সাহেবের যে সকল ‘এলহাম’ এর উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, আপনারা সেগুলোকে ওহী মনে করেন কি না? যদি সেগুলোকে ওহী মনে করে থাকেন, তাহলে মির্জা সাহেব যে অস্বীকার করলেন ‘এগুলো ওহীর ওপর ভিত্তি করে নয়’Ñ তার বক্তব্যটা মিথ্যা হয়ে গেল না?

 

পঞ্চম প্রশ্ন  

‘বারাহিনে আহমদিয়া’য় মির্জা সাহেব লিখেছিলেন, সুরা সাফ্ফ এর দশ নম্বর আয়াত হযরত ঈসা আ. সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী। আর আল্লাহ তায়ালা প্রথম থেকেই এই ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে আমাকে অন্তর্ভূক্ত করে রেখেছেন। (দ্বিতীয় প্রশ্নে আমরা মির্জা সাহেবের পূর্ণ বক্তব্য উল্লেখ করেছি।) সেখানে তিনি এই আয়াতকে নিজের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে উল্লেখ করেননি।

পক্ষান্তরে ‘এজাজে আহমদিয়া’তে তিনি লেখেন,

“বারাহিনে আহমদিয়া’র মধ্যে আমাকে বলা হয়েছে যে, তোমার সুসংবাদ তো কোরআন ও হাদিসে বিদ্যমান। তুমিই তো

 (هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ)

এই আয়াতের প্রতিপাদ্য।’ -এ‘জাযে আহমাদী, রুহানী খাযায়েন ১৯/১১৩

   মির্জা সাহেবের এদুটো কথা সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী। কেননা ‘বারাহিনে’ তার বক্তব্য হলো এই আয়াতের মূল প্রতিপাদ্য হযরত ঈসা আ.। তবে আমাকেও তাঁর সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ‘এজাজে আহমদিয়া’তে দাবি করেছেন, এই আয়াতের মূল প্রতিপাদ্য সে নিজেই। মজার কথা হলো উভয় জায়গায় তিনি স্বীয় এলহামের উদ্ধৃতি দিয়েছেন।

প্রশ্ন হলো এই দুটো বক্তব্যের মধ্যে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা? কোন এলহামটি শুদ্ধ আর কোন এলহামটা ভুল?

 

৬ষ্ঠ প্রশ্ন  

এজাজে আহমদি’ নামক গ্রন্থে মির্জা সাহেব বলেছেনÑ আল্লাহ তায়ালা বারাহিনে আহমাদিয়াতে বহুবার আমাকে মাসিহে মাওউদ আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু আমি আল্লাহর কথা বুঝতি পারিনি। বার বছর এভাবে অতিবাহিত হলো। বার বছর পর আল্লাহ বিষয়টা আমাকে খুলে খুলে আরও স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন যে, আমিই সেই মাসিহে মাওউদ। তখন আমি বুঝতে পারলাম।)

তার নিজের ভাষায়, 

‘‘আল্লাহ তায়ালা আমাকে ‘বারাহিনে আহমদিয়া’তে বারবার মাসিহে মাওউদ আখ্যায়িত করলেও আমি এ ব্যাপারে একেবারে বেখবর ছিলাম। প্রায় বার বছর পর্যন্ত এ-ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। তাই হযরত ঈসা আ. এর জীবিত থাকার প্রচলিত আকিদার ওপরই আমি অটল ছিলাম। দীর্ঘ বার বছর পর যখন আমার ওপর হাকিকত ও বাস্তবতা প্রকাশ করার সময় এলো, অসংখ্য ধারাবাহিক এলহামের মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে, তুমিই হলে প্রতিশ্রুত মাসিহ।’’ -এ‘জাযে আহমাদী, রুহানী খাযায়েন ১৯/১১৩

মির্যা কাদিয়ানীর এ বক্তব্যের মূল কথা হলো, ১২ বছর পূর্বে আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে মির্যা কাদিয়ানীকে মাসীহে মাওউদ আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু মির্যা কাদিয়ানী সে ওহী বুঝতে পারেনি। ১২ বছর অতিক্রম করার পরে বুঝতে পেরেছে যে, সে মাসীহে মাওউদ।  

এর সম্পূর্ণ বিপরীতে ‘আয়নায়ে কামালাতে ইসলামে’ তিনি লেখেন,

‘‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমাকে মাসিহ ইবনে মারিয়াম বানানো হয়েছে এবং আমি তার স্থানে অবতীর্ণ হয়েছি এ-কথা আমি এক যুগ থেকেই জানতাম। কিন্তু এ-কথা কাউকে না জানিয়ে গোপন রেখেছি। এর ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা হতে পারে কিনা এ-কথা চিন্তা করে আমি আমার আকিদাও পরিবর্তন করিনি। পূর্বের আকিদার ওপরই অটল ছিলাম। এই আকিদা প্রকাশ করতে আমি দশ বছর অপেক্ষা করেছি।’’ -আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম, রুহানী খাযায়েন ৫/৫৫১

   তার এই দুটো বক্তব্যও পরস্পর বিরোধী। ‘এজাজে আহমদিয়া’র মধ্যে বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে প্রতিশ্রæত মাসিহ বানিয়ে দিয়েছেন, বার বছর পর্যন্ত এ-কথা আমি জানতামই না। আর ‘আয়নায়ে কামালাতে ইসলামে’র মধ্যে বলেন, আল্লাহর কসম আমি জানতাম যে, আমাকে প্রতিশ্রুত মাসিহ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দশ বছর পর্যন্ত আমি তা গোপন রেখেছি। এই দুই বক্তব্যের মধ্যে কোনটি ভুল আর কোনটি সঠিক? কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা?

 

সপ্তম প্রশ্ন

   ‘‘আল্লাহ তায়ালা আমার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়েছেন বিধায় ‘বারাহিনে আহমদিয়া’তে আমাকে প্রতিশ্রæত মাসিহ বানিয়ে দেয়ার ওহীটি আমি বুঝতে পারিনি। এটি ছিল আমার সরলতা। এই সরলতাই আমার সত্যবাদিতার অনেক বড় একটি প্রমাণ। অন্যথায় ‘বারাহিনে আহমদিয়া’তে আমাকে প্রতিশ্রæত মাসিহ বানিয়ে দেয়ার পরেও কেন আমি তার দাবি করিনি! আর কেনই-বা বারাহিনে আহমদিয়ার ওহীর বিপরীত আমি লিখতে গেলাম!’’ -এ‘জাযে আহমাদী, রুহানী খাযায়েন ১৯/১১৪)

   এখানে মির্জা সাহেব স্বীকার করেছেন, তিনি বার বছর যাবৎ আল্লাহর ওহী বুঝতেই পারেননি। এবং ওহীর বিপরীতে হযরত ঈসা আ. এর পুনরাগমনের আকিদা তিনি লিখে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো যে ব্যক্তি বার বছর পর্যন্ত আল্লাহর ওহীর মর্ম বুঝেনি এবং ওহীর বিপরীতে বার বছর পর্যন্ত মিথ্যা বলে আসছিল , সে কীভাবে প্রতিশ্রুত মাসিহ হতে পারে? আরেকটি প্রশ্ন হলো, কোন ব্যক্তির ওহীর বিপরীতে মিথ্যা প্রচার করা তার মিথ্যাবাদিতার বড় প্রমাণ নাকি মির্জা সাহেবের কথা অনুযায়ী তার সত্যবাদিতার বড় প্রমাণ?

 

অষ্টম প্রশ্ন

‘আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম’ নামক গ্রন্থে মধ্যে মির্জা সাহেব শপথ করে বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে মাসিহে মাওউদ (প্রতিশ্রুত মাসিহ) এবং মাসিহে ইবনে মারিয়াম আখ্যায়িত করেছেন। পক্ষান্তরে ‘ইযালায়ে আওহাম’ নামক গ্রন্থে বলেন, আমি তো মাসিহে মাওউদ নই। বরং আমি তো মাছিলে মাসিহ অর্থাৎ মাসিহে মাওউদের মতো। যে বলবে আমি মাসিহে মাওউদ হবার দাবি করেছি সে মিথ্যাবাদী। উলামায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে এক জায়গায় তিনি বলেন,

‘‘সম্মানিত উলামায়ে কেরাম! আমার কথাগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন! আমি তো ‘মাছিলে মাসিহ’ অর্থাৎ ‘মাসিহ সদৃশ’ হবার দাবি করেছিলাম। কিন্তু কিছু স্বল্পবোধ-সম্পন্ন লোক ধরে নিয়েছে যে, আমি খোদ মাসিহে মাওউদ হবার দাবি করেছি। আমার এই দাবিটি তো আজ নতুন নয়। এটি সেই পুরাতন দাবি, যেটি বারাহিনে আহমদিয়ার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্টভাবে আমি উল্লেখ করেছি। যা প্রকাশ হয়েছে আজ সাত বছর থেকে বেশি সময় হয়ে গেল। আমি কখনো মাসিহ ইবনে মারিয়াম হবার দাবি করিনি। যে ব্যক্তি আমার ওপর এমন অপবাদ দেবে সে জঘন্য মিথ্যাবাদী। আমার পক্ষ থেকে তো সাত-আট বছর বরাবর এটাই প্রচার হয়ে আসছে যে, আমি মাছিলে মাসিহ।’’ -ইযালায়ে আওহাম, রুহানী খাযায়েন ৩/১৯২)

এখন প্রশ্ন হলো,প্রকৃতপক্ষে মির্জা সাহেব কোন জিনিসের দাবি করেছেন? তিনি কি মাসিহে মাওউদ হবার দাবি করেছেন নাকি মাছিলে মাসিহ হওয়ার দাবি করেছেন।

 

নবম প্রশ্ন

‘ইযালায়ে আওহাম’ নামক গ্রন্থে মির্জা সাহেব লেখেন,

‘‘বলাই বাহুল্য যে, হযরত ঈসা আ. এর পুনরাগমনের ভবিষ্যদ্বাণীটি সর্বজন-মানিত উঁচুস্তরের একটি ভবিষ্যদ্বাণী। হাদিসের ছয় কিতাবে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে কোনটিই  এটির সমমান বা সমপর্যায়ের প্রমাণিত হয় না। ‘তাওয়াতুরে’র প্রথম স্তরের অধিকারী এটি। পবিত্র ইঞ্জিলও তার সত্যায়ন করে।’’ -ইযালায়ে আওহাম, রুহানী খাযায়েন ৩/৪০০)

মির্জা সাহেবের এই বক্তব্যের মূল দাবি হলো, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর পুনরাগমনের ভবিষ্যদ্বাণীটি মুতাওয়াতির। অর্থাৎ ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম পূনরায় পৃথিবীতে আগমন করার বিষয়টি অকাট্ট ও অনস্বীকার্য।

অপরদিকে মির্জা সাহেব বলেছেন,

“আমি কখনও মাসিহ ইবনে মারিয়াম হবার দাবি করিনি। যে আমার ওপর এই অপবাদ দেবে, (বলবে যে আমি ঈসা হবার দাবি করেছি।) সে জঘন্য অপবাদক ও মিথ্যাবাদী।” -ইযালায়ে আওহাম, রুহানী খাযায়েন ৩/১৯২)

মুতাওয়াতির হাদিসে এসেছে হযরত মাসিহ ইবনে মারিয়ামই পৃথিবীতে পুনরাগমন করবেন। আর মির্জা সাহেব দাবি করছেন তিনি মাসিহ ইবনে মারিয়াম নন। যারা তাকে মাসিহ বলবে তারা মিথ্যাবাদী। সুতরাং যারা নবী সা. এর মুতাওয়াতির ভবিষ্যদ্বাণীর উদ্দেশ্য মির্জা সাহেবকে মনে করবে, মির্জা সাহেবের কথানুযায়ী তারা জঘন্য অপবাদক ও মিথ্যাবাদী কি না?

 

১০ নং প্রশ্ন   

‘ইযালায়ে আওহামে’র ৫৫৭ পৃষ্ঠায় (রূহানী খাযায়েন ৩/৪০০) মির্জা সাহেব স্বীকার করেছেন যে, নবী সা. অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদিসে ঈসা আ. এর পুনরাগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। নবী সা. যখন তার পুনরাগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, নিশ্চয় তাকে চেনার কিছু আলামতও বলে দেবেন। এমন একটি হাদিস আমরা এখানে উল্লেখ করছি, যেটি মির্জা মাহমুদ ‘হাকিকাতুন নবুওয়াহ’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করে মির্জা সাহেবের নবুয়াতের প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করেছে।

মির্যা মাহমুদ লিখেছে

‘‘নবী কারিম সা. এরশাদ করেন, নবীগণ হলেন পরস্পর বৈমাত্রেয় ভায়ের মতো। যদিও তারা এক মায়ের সন্তান নন, কিন্তু তাদের দ্বীন তো অভিন্ন। আর হযরত ঈসা আ. আমার বেশি ঘনিষ্ঠ। কেননা তার ও আমার মাঝে কোন নবী আগমন করেননি। আবার তিনি পুনরাগমনও করবেন। সুতরাং যখন তাকে দেখবে তোমরা তাকে চিনে নেবে। তিনি হবেন মধ্যম গড়নের। তার গায়ের রং হবে লাল ও সাদার মাঝামাঝি। তিনি যখন অবতরণ করবেন তার চুল বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানি ঝরবে। তিনি ক্রুশ ধ্বংশ করবেন। শুকর হত্যা করবেন। কর বা জিজিয়া মাওকুফ করে দেবেন। পৃথিবীতে এমন রাজত্ব কায়েম করবেন, একই মাঠে গরু, মহিষ, উট, ভেড়া ও বাঘ-সিংহ পাশাপাশি চরে বেড়াবে, কিন্তু কেউ কারো ওপর হামলা করবে না। শিশুরা সাপকে খেলনা বানিয়ে খেলা করবে কিন্তু তারা কোন ক্ষতি করবে না। তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর থাকার পর ইন্তেকাল করবেন। মুসলমালগণ তাঁর জানাজা পড়বে।’’ -হাকিকাতুন নাবুয়াহ ১৯১-১৯২

এই হাদিস শরিফে বর্ণিত আলামতগুলোর প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করুন। এবার ইনসাফের সঙ্গে বলুন তো, হাদিস শরিফে বর্ণিত আলামতগুলো কি মির্জা সাহেবের মধ্যে পাওয়া গেছে? যদি পাওয়া না যায়, (এবং বাস্তবেই তা পাওয়া যায়নি), তাহলে মির্জা সাহেবকে প্রতিশ্রুত মাসিহ আখ্যা দেয়া কীভাবে ঠিক হবে?

 

১১ নং প্রশ্ন  

মির্যা সাহেব লিখেছেন,

‘‘একবার আমি দিল্লি গিয়েছিলাম। ওখানকার লোকদের বললাম, তেরশ বছর যাবৎ তোমরা এই বিশ^াস লালন করে আসছো যে, হুজুর সা. কে দাফন করা হয়েছে আর হযরত ঈসা আ. কে জীবিত আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এই ‘বিশ্বাস’ তোমাদের জন্য উপকারী হয়েছে না ক্ষতিকর? এর উত্তর তোমরা নিজেরাই ভাবোপ্রায় লাখের মতো মানুষ ইসলাম ছেড়ে মুরতাদ হয়ে গেছে। প্রত্যেক খান্দানে, প্রত্যেক ফেরকায় সাইয়েদ, মুগল, পাঠান ও কুরাইশি ইত্যাদি । এসব কিছু তো হযরত ঈসা আ. কে বারবার জীবিত বলারই কুফল। দেখ, এবার আমি নতুন এক আকিদার কথা বলি, যেটি পবিত্র কোরআন ও রাসুল সা. এর ‘স্পষ্ট স্বাক্ষ্য’ দ্বারাই প্রমাণিত। আর তা হলো, হযরত ঈসা আ. কে মৃত বলে বিশ্বাস করে নাও!’’ (মালফুজাত পুরাতণ সংস্করণ ১০/৩০০)

মির্জা সাহেবের এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, মির্জা সাহেবের পূর্বে সাহাবা-তাবেয়ীদের যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিগত তেরশ বছর হযরত ঈসা আ. কে জীবিত আসমানে উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সকল মুসলমান একমত ছিল। কোন সাহাবি, তাবেয়ী কিংবা কোন মুজাদ্দিদ উম্মতকে এমন বিশ্বাসের কথা বলেননি যে, হযরত ঈসা আ. মৃত্যুবরণ করেছেন।

এখন প্রশ্ন হলো, উম্মতে মুসলিমার তেরশত বছরের ইজমায়ী আকীদার বিপরীতে নিজ মনগড়া কোনো আকীদার উদ্ভাবন করা কুফুরী কি না?? এর উদ্ভাবক যিন্দিক কি না?

 

১২ নং প্রশ্ন  

সুরা সাফফের দশ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,‘তিনি সেই সত্তা,যিনি নিজ রাসুলকে সঠিক পথের দিশা ও সত্য ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, যাতে তাকে সকল ধর্মের ওপর বিজয় দান করেন।’ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মির্জা সাহেব বলেন,

“অর্থাৎ রাসুল সা. কে এক ‘বিশ্বজয়’ দান করা হবে। কিন্তু এই বিশ্বজয় রাসুলের যুগে অস্তিত্ব লাভ করেনি। ওদিকে আল্লাহর তায়ালার ভবিষ্যদ্বাণীও বিফল যেতে পারে না। তাই এই আয়াতের ব্যাপারে অতীতের সকল আলেমের দাবি হলো, এই বিশ্বজয় প্রতিফলিত হবে মাসিহে মাওউদের যামানায়।’ -চশমায়ে মা‘রেফাত, রুহানী খাযায়েন ২৩/৯১)

মির্যা কাদিয়ানীর এ বক্তব্যে তার দু’টি দাবি ফুটে উঠেছে:

এক. আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে বিশ্বজয়ের সুসংবাদ দান করেছেন তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে প্রকাশিত হয়নি।

দুই. এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে, সে বিশ্বজয় অস্তিত্বে আসবে প্রতিশ্রুত মাসীহের যামানায়।

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বিবেকের কাছে প্রশ্ন, মাসীহে মাওউদের দাবিদার মির্যা কাদিয়ানীর যামানায় কি সে বিশ্বজয় অর্জিত হয়েছে? এর উত্তর অবধারিতভাবেই না-বোধক হবে। তাহলে কি এ কথা প্রমাণিত হয়না যে, মির্যা কাদিয়ানী মিথ্যাবাদী ও প্রতারক?

 

১৩ নং প্রশ্ন  

‘আরবাইন’ নামক কিতাবে মির্জা সাহেব লিখেছেন,

‘‘কিন্তু আবশ্যক ছিল কোরআন ও হাদিসের ওই সকল ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হওয়া, যেগুলোতে বলা হয়েছে, মাসিহে মাওউদ যখন আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন:

১.      তিনি মুসলিম আলেমদের হাতে অনেক কষ্ট পাবেন।

২.      তারা তাকে কাফের আখ্যায়িত করবে।

৩.      তাকে হত্যা করার ফতোয়া দেওয়া হবে।

৪.      তার জঘন্য নিন্দা করা হবে।

৫.      তাকে মনে করা হবে ইসলাম বহির্ভূত।

৬.      এবং মনে করা হবে তিনি ইসলাম ধ্বংশকারী।’’ -আরবাইন, রুহানী খাযায়েন ১৭/৪০৪)

মাসিহে মাওউদের এই ছয়টি আলামত যেগুলো মির্জা সাহেব কোরআনের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন, কোরআনের কোন আয়াতে উল্লেখ আছে?

নিশ্চয় কোথাও এ বিষয়ের উল্লেখ নেই। অতএব যে ব্যক্তি কোরআনের উপর দেদারছে মিথ্যা আরোপ করতে পারে তাকে কোন বিবেকে কাদিয়ানী সম্প্রদায় মাসীহে মাওউদ ও মাহদী মেনে নিচ্ছে!!

 

১৪ নং প্রশ্ন  

হযরত মাসিহের আগমনকাল ও স্থান নির্ণয় করতে গিয়ে মির্জা সাহেব বলেন, ‘আম্বিয়া আ. এর কাশফ এই কথার ওপর মোহর মেরে দিয়েছে যে, মাসিহে মাওউদ চতুর্দশ শতাব্দির মাথায় পাঞ্জাবে জন্ম গ্রহণ করবেন।’ -আরবাঈন,রুহানী খাযায়েন ১৭/৩৭১)

এখানে মির্জা সাহেব অসংখ্য নবীদের দিকে দুটি কথা সম্পৃক্ত করেছেন। (১) মাসিহে মাওউদ চতুর্দশ শতাব্দির মাথায় আগমন করবেন (২) এবং তিনি হিন্দুস্তানের পাঞ্জাবে জন্ম গ্রহণ করবেন।

‘আরবাইনে’র প্রথম এডিশনে ‘পূর্বের আম্বিয়া আ. এর কাশফ’ বাক্যটি ছিল। আমরা এখানে তারই উদ্ধৃতি দিয়েছি। কিন্তু পরে পরিবর্তন করে তার স্থানে বসিয়ে দেয়া হয় ‘পূর্বের আউলিয়াদের কাশফ’ এই বাক্যটি। তার পরও কিন্তু কথাটা মিথ্যাই রয়ে গেল। 

 

১৫ নং প্রশ্ন  

মির্যা সাহেব লিখেছেন

‘‘এভাবে অনেক সহিহ হাদিসেও এসেছে যে, মাসিহে মাওউদ শতাব্দির শিরোভাগে আগমন করবেন এবং তিনি হবেন চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ।’’ -বারাহীনে আহমাদিয়া পঞ্চম খন্ড, রুহানী খাযায়েন ২১/৩৫৯)

   মির্জা সাহেব এখানে ‘অনেক সহিহ হাদিস’ বলে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। আর অনেক হতে হলে কমপক্ষে তিনটি হাদিসের প্রয়োজন। সুতরাং মাসিহে মাওউদের এই দুই আলামত সম্বোলিত তিনটি সহিহ হাদিস উল্লেখ করুন! (আমাদের দাবি, আপনারা কখনই এ মর্মে কোন হাদিস পেশ করতে পারবেন না। হোক না তা কোন যয়ীফ বা দুর্বলসূত্রে বর্ণিত কোনো যয়ীফ হাদিস।

 

১৬ নং প্রশ্ন  

 ইযালায়ে আওহাম’ নামক কিতাবে তিনি বলেনÑ ‘‘সহিহ মুসলিম শরিফে এই হাদিস লেখা আছে যে, মাসিহে মাওউদ যখন আসমান থেকে অবতরণ করবেন, তখন তার পোশাক হবে হলুদ রঙের।’’ ইযালায়ে আওহাম, রুহানী খাযায়েন ৩/১৪২)

সহিহ মুসলিম শরীফে কি ঈসা আ. এর অবতরণ সংক্রান্ত আলোচনায় ‘আসমান’ শব্দের উল্লেখ আছে? যদি বিদ্যমান থাকে তাহলে মির্যা সাহেবসহ আপনারা কেন হযরত ঈসা আ. এর আসমান থেকে অবতরণের বিষয় অস্বীকার করেন? আর যদি সহীহ মুসলিমে এই শব্দ উল্লেখ না থাকে তাহলে কি এটি মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যাচার হলো না?

 

১৭ নং প্রশ্ন  

 মির্জা সাহেব লেখেন,

‘‘যদি হাদিসের বর্ণনার ওপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে প্রথমে ওই সকল হাদিসের ওপর আমল করা উচিত যেগুলোর শুদ্ধতা ও নির্ভরযোগ্যতা ওই হাদিস থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে। যেমন বোখারী শরীফের ওই সকল হাদিস যেগুলোতে শেষ যুগের বিভিন্ন খলিফার খবর দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ওই খলিফা যার সম্পর্কে বোখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে যে, আসমান থেকে তার উদ্দেশ্যে আওয়াজ আসবে,

هذا خليفة الله المهدي

 ‘ইনি আল্লাহর খলিফা মাহদী’। এবার চিন্তা করো এই হাদিসটি কোন স্থরের যেটি বোখারি শরিফের মতো কিতাবে রয়েছে। কোরআনের পরে যেটি সবচে বিশুদ্ধ গ্রন্থ।’’ শাহাদাতুল কুরআন, রুহানী খাযায়েন ৬/৩৩৭)

এই তো আমাদের সামনে বোখারি শরিফ রয়েছে। আমরা এই হাদিসটি তাতে পাইনি। তবে মির্জা সাহেবের ঘরে যেমন ‘কাদিয়ান’ শহরের নাম লিখিত আছে এমন একটি কুরআন ছিল, সম্ভবত তার কাছে এমন একটি বোখারি শরিফও ছিল যাতে উল্লেখিত হাদিসটিও ছিল। সেখান থেকে দেখে দেখে তিনি তার কিতাবে এই হাদিসটি লিখে দিয়েছেন।

যাইহোক,মির্জা সাহেব সহিহ বোখারির উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আপনারা দয়া করে তার একটা ফটোকপি হলেও প্রকাশ করবেন! আর যদি তিনি মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন, তাহলে জবাব দিন, যিনি বোখারী শরীফের মতো প্রসিদ্ধ একটি কিতাবের দিকে মিথ্যা সম্পৃক্ত করতে পারেন, তিনি কি ‘মাসিহ’ দাবি করার ক্ষেত্রে সত্যবাদী হবেন? মির্জা সাহেবই তো বলেছিলেন,

“যার একটা কথার মধ্যে মিথ্যা প্রমাণিত হবে তার অন্য কথার মধ্যে আর গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।’ -চশমায়ে মারেফত, রুহানী খাযায়েন ২৩/২৩১)

 

১৮ নং প্রশ্ন  

স্বীয়গ্রন্থ আনজামে আথমে লেখেন,

‘‘মুহাম্মদি বেগমের বিবাহ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যায়নে রাসুল সা.ও পূর্ব থেকে একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। .............অথাৎ ‘মাসিহে মাওউদ বিবাহ করবেন এবং তার সন্তান-সন্তুতিও হবে’। বলাই বাহুল্য এখানে বিবাহ এবং সন্তানের আলোচনা করাই মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। কেননা সাধারণভাবে বিবাহ সকলেই করে থাকে এবং তাদের ছেলে-সন্তানও জন্ম গ্রহণ করে। তাতে বিশেষত্বের কী আছে! এখানে বিবাহ দ্বারা উদ্দেশ্য এমন বিবাহ যেটি তার জন্য ‘নিশান’ বা আলামত হবে। আর সন্তান দ্বারা ওই বিশেষ সন্তানই উদ্দেশ্য যার সম্পর্কে আমি আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছি। এখানে রাসুল সা. আমার অস্বীকারকারী -যাদের অন্তর অন্ধকারাচ্ছন্ন- তাদের সন্দেহের জবাবেই যেন বলছেনÑ মুহাম্মদি বেগমের বিবাহ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীটি অবশ্যই পূর্ণ হবে।’’ -আনজামে আথম, রুহানী খাযায়েন ১১/৩৩৭)

   এই বক্তব্য দেয়ার পূর্বে মির্জা সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী নুসরাত জাহান বিদ্যমান ছিলেন। মুবারক আহমদ ছাড়া বাকি সকল সন্তানেরই জন্ম হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মির্জা সাহেবের বক্তব্য হলো,হাদিসে উল্লেখিত মাসিহে মাওউদের বিবাহ করা ও সন্তান জন্ম নেয়া সংক্রান্ত যে দুটি আলামত বর্ণিত হয়েছে তা বিশেষ বিবাহ ও বিশেষ সন্তানেরই ইঙ্গিতবহ। আর তা পূর্ণ হবে মির্যা কাদিয়ানীর সাথে মুহাম্মদি বেগম এর বিবাহ এবং তার গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া সন্তানের মাধ্যমে। দুঃখের বিষয় হলো, এই বিবাহই তার ভাগ্যে জুটেনি। সন্তান তো তার পরের কথা।

    এবার বলুন! রাসুল সা. এর ভবিষ্যদ্বাণী কি (নাউযুবিল্লাহ) ভুল ছিল, নাকি  মির্জা সাহেবের ‘প্রতিশ্রæত মাসিহ’ হবার দাবি মিথ্যা? আর আমাদেরকে এটাও বলুন, যখন মির্জা সাহেবের এই ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত হলো, তখন তার ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন রূদয়’ বিরোধীদের প্রতি জবাবই বা কোথায় গেল? যার ব্যাপারে রাসুল সা. এর ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণতা পায়নি সে কীভাবে মাসিহে মাওউদ হতে পারে? এক জায়গায় এই ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কেই তো মির্জা সাহেব বলেছিলেন,

“স্মরণ রাখবে,যদি এই ভবিষ্যদ্বাণীর দ্বিতীয় অংশ পূর্ণ না হয়। (অর্থাৎ মুহাম্মদি বেগমের স্বামীর মৃত্যু এবং সে আমার বিবাহে আসা।) তাহলে আমি সর্বনিকৃষ্ট বলে প্রমাণিত হবো।” (আনজামে আথম, রুহানী খাযায়েন ১১/৩৩৮)

তিনি আরো বলেন-

“এই ভবিষ্যদ্বাণীকে আমি আমার সত্য ও অসত্যতার মাপকাঠি আখ্যা দিচ্ছি। এটি আমি আমার নিজের পক্ষ থেকে বলছি না। আমার প্রভুই আমাকে খবর দিয়েছেন।’ (আনজামে আথম, রুহানী খাযায়েন ১১/২২৩)

   মির্জা সাহেবের দাবি অনুযায়ী মাসিহে মাওউদের বিশেষ আলামত ‘মুহাম্মদি বেগমে’র সঙ্গে তো তার বিবাহ হয়নি। সুতরাং তার নিজস্ব স্বীকারোক্তিতে তিনি ‘সর্বনিকৃষ্ট’ ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলেন। এখন বলুন, মির্জা সাহেবকে যদি ‘মাসিহে কাজ্জাব’ উপাধিতে ভষিত করা হয় তাহলে কি তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মূল বাস্তবতাটা ফুটে ওঠে না?

 

১৯ নং প্রশ্ন  

   এক জায়গায় মির্জা সাহেব বলেন,

‘‘মাসিহে মাওউদের মৃতে্যুর পর মানুষের মধ্যে বন্ধাত্ব বিস্তার করবে। অর্থাৎ তার পর যারা পৃথিবীতে আসবে তারা জন্তু-জানোয়ার ও হিংস্র প্রাণীর মতো হয়ে যাবে। প্রকৃত মানবতা ও মানুষত্ব বলে পৃথিবীতে কিছুই থাকবে না। তারা হালালকে হালাল মনে করবে না। হারামকে হারাম মনে করবে না। আর এদের ওপরই কিয়ামত কায়েম হবে।’’ -তিরইয়াকুল কুলুব, রুহানী খাযায়েন ১৫/৪৮৩)

   এবার বলুন! মির্জা সাহেবের পরে কি মাসিহে মাওউদের এই বিশেষ আলামত পাওয়া গিয়েছে? তার মৃত্যুর পর পৃথিবীতে যত মানুষ জন্ম গ্রহণ করেছে তারা সবাই কি হিংস্র পশু? মানুষত্ব বলতে কি পৃথিবীতে কিছুই নেই? হালালকে হালাল মনে করে এবং হারামকে হারাম মনে করে এমন মানুষ কি পৃথিবী থেকে একেবারে বিলপ্ত হয়ে গেছে?

   যদি এই আলমতটি মির্জা সাহেবের মধ্যে না পাওয়া যায় তাহলে তিনি মাসেহে মাওউদ কীভাবে হলেন? আর যদি পাওয়া গেছে বলে আপনারা দাবি করেন, তাহলে অন্যদের কথা বাদই দিলাম, খোদ কাদিয়ানী জামাতের ব্যাপারে আপনাদের কী ফতোয়া? তাহলে এটা কি হিংস্র পশুদের দল? তাদের মধ্যে কি মানবতা বলতে কিছু নেই? তাদের কি হালাল ও হারামের পার্থক্য বোধও নেই?

 

২০ নং প্রশ্ন  

   মির্জা সাহেব প্রতিশ্রুত মাসিহ বনে গেলেন, তো মনগড়া দাজ্জালও বানিয়ে নিলেন। আর তার দাজ্জালরা ছিল খ্রিস্টান পাদ্রীগণ। তিনি পাদ্রীদের দাজ্জাল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আমাদের প্রশ্ন হলো, পাদ্রী তো পৃথিবীতে আগ থেকেই ছিল। এমন কি রাসুল সা. এর যমানার আগ থেকেই তাদের মুশরিকি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ চলে আসছিল। পবিত্র কোরআনেও এর প্রমাণ বিদ্যমান। তাছাড়া দাজ্জাল তো মাসিহের হাতে নিহত হওয়ার কথা ছিল। অথচ মাসিহে মাওউদের দাবিদার মির্জা সাহেব মৃত্যু বরণ করেছেন আজ একশ বছর থেকে বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেল কিন্তু তার বানানো দাজ্জালরা এখনো পৃথিবীতে বহাল তবিয়তেই আছে। তিনি যদি মাসিহে মাওউদ হতেন তাহলে মাসিহে মাওউদের এই আলামতটি তার মধ্যে কেন পাওয়া যায়নি?

   দ্বিতীয়ত দাজ্জাল পৃথিবীতে থাকার কথা ছিল মাত্র চল্লিশ দিন। সহিহ হাদিসগুলোতে এমনি বর্ণিত হয়েছে। অথচ মির্জা সাহেবের বানানো দাজ্জালদের চল্লিশ দিনের চিল্লা এখনো পূর্ণ হয়নি!

তৃতীয়ত মির্জা সাহেব লেখেন,

‘‘আমার মূল কাজ, যে কাজের জন্য আমি এই ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছি তা হলো, খ্রিস্টবাদের ভিত্তি ভেঙে দেয়া। ত্রিত্ববাদ অপসারণ করে একত্ববাদ প্রসার করা। এবং রাসুল সা. এর উচ্চ মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, আযমত ও শান দুনিয়াবাসীর সামনে তুলে ধরা। সুতরাং আমার কাছ থেকে যদি হাজার নিশানও প্রকাশ পায়, কিন্তু এই মূল কাজগুলো আমার মাধ্যমে না হয়, তাহলে আমি মিথ্যাবাদী।

   এত কিছুর পরও মানুষ আমার সঙ্গে কেন দুশমনি করে! তারা আমার শেষ কীর্তি কেন দেখতে চায় না! আমি যদি ওই সকল কাজ করে দেখাতে পারি যেগুলো মাসিহে মাওউদ ও মাহদী আ. এর করার কথা ছিল, তাহলে তো আমি সত্যবাদী বলে প্রমাণিত হবো। আর আমার দ্বারা যদি কিছুই না হয়, এবং আমার ইন্তেকাল হয়ে যায়, তাহলে সবাই সাক্ষী, আমি মিথ্যাবাদী।’’ (পত্রিকা ‘বদর’ ১৯/৭/১৯০৬ঈ.)

   হাঁ, দুনিয়াবাসী সাক্ষী, মির্জা সাহেবের আগমনের ফলে ইসলামের সামান্যতমও উন্নতি হয়নি। বরঞ্চ আরো অবনতিই হয়েছে। আজ পর্যন্ত তার দলটাই তো ইসলাম বহির্ভূত দল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। 

এতকিছুর পরেও কাদিয়ানী ভায়েরা কি মির্জা সাহেবের মিথ্যাবাদী হবার সাক্ষ্য দেবেন না?

 

২১ নং প্রশ্ন  

 মির্জা সাহেবের ছেলে মির্জা বশির আহমদ এম. এ. মির্জার জীবনীগ্রন্থ ‘সিরাতুল মাহদী’ কিতাবে লেখেন, ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আমার নিকট আম্মাজান বর্ণনা করেছেন যে, মাসিহে মাওউদ তখন যুবক। একবার তিনি গিয়েছিলেন তোমার দাদার পেনশনের টাকা উঠাতে। সঙ্গে গিয়েছিলেন চাচাতো ভাই ইমামুদ্দীনও। কিন্তু পেনশনের টাকা উঠিয়ে তিনি আর কাদিয়ান এলেন না। ইমামুদ্দীনের ফাঁদে পড়ে ঘুরতে লাগলেন এদিক-ওদিক। একপর্যায়ে সমস্ত টাকাই উড়িয়ে ফেললেন। তখন ইমামুদ্দীন তাকে ছেড়ে চলে গেল। আর মাসিহে মাওউদ বাড়িতে ফিরতে পারলেন না লজ্জায়। তাই তিনি চলে গেলেন শিয়ালকোট। ওখানে গিয়ে একেবারে অল্প বেতনে ডিপুটি কমিশনারের কাছারিতে চাকুরি করতে লাগলেন। তোমার দাদারও ইচ্ছা ছিল তিনি যেন চাকুরি করেন।’’ (সিরাতুল মাহদী, নতুন সংস্করণ,১/৩৮, পুরাতণ সংস্করণ,  ১/৪৩)

প্রশ্ন হলো, যে ব্যক্তি নিজ পিতার পেনশনের টাকা মেরে খায় ও তার মধ্যে খেয়ানত করে এমন ব্যক্তি কি আল্লাহ তায়ালার ওহীর ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত হতে পারে? উপরন্তু এমন বিশ্বাস-ঘাতক ও চোর কি মাসিহে মাওউদও হতে পারে?

আল্লাহ তায়ালা হক বুঝার তৌফিক দান করুক। আমীন

Related Post