কাদিয়ানী ধর্মের আসল রূপ

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

আকীদায়ে খতমে নবুওতের অর্থ, হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পরে কোনো ব্যক্তির নবী হওয়া সম্ভবই নয় কারণ আল্লাহ তাআলা নবুওত ও রিসালাতের ধারাবাহিকতা তাঁর মাধ্যমে সমাপ্ত করেছেন এবং কুরআন মাজীদে তাঁকে খাতামুন নাবিয়্যীনবলে ঘোষণা করেছেন। সুতরাং তিনিই শেষ নবী এবং তাঁর শরীয়তই শেষ শরীয়ত। কিয়ামত পর্যন্ত বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও ভূখন্ড নির্বিশেষে প্রত্যেক মানব-সন্তানের জন্য তাঁর আদর্শই শিরোধার্য এবং তাঁর প্রতি ঈমান ও আনুগত্য অপরিহার্য। ইসলামে খতমে নবুওতের আকীদা ঐরকমই অকাট্য, সুস্পষ্ট ও সর্বজনবিদিত যেমন নবুওতের আকীদা। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবী হওয়া এবং আখেরী নবী হওয়া দুটো আকীদাই সমান অকাট্য। এটি দ্বীন ইসলামের মুতাওতির বিষয়াদির অন্যতম। কুরআন মাজীদেও এর স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা বিদ্যমান।

আল্লাহর শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খতমে নবুওতের আকীদা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন শুধু তাই নয় অনেক হাদীসে এই ভবিষ্যদ্বাণীও করে গেছেন যে, কিয়ামতের আগ পর্যন্ত অনেক মিথ্যা নবুওতের দাবিদার আবির্ভূত হবে, যারা হবে চরম মিথ্যুক ও প্রতারক। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমের হাদীসে আছে, প্রায় ত্রিশজন চরম মিথ্যাবাদী প্রতারকের আবির্ভাব না ঘটা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। এদের প্রত্যেকেই দাবি করবে, সে আল্লাহর রাসূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:

لا تقوم الساعة حتى تقوم دجالون كذابون قريبا من ثلاثين كلهم يزعم أنه رسول الله.

-সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ফিতান ৮৪; সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হাদীস : ৭১২১

আরো ইরশাদ হয়েছে,

أنه سيكون في أمتي كذابون ثلاثون كلهم يزعم أنه نبي وأنا خاتم النبيين.

 ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মতের মাঝে ত্রিশজন চরম মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটবে, যাদের প্রত্যেকে দাবি করবে, সে নবী। অথচ আমি খাতামুননাবিয়্যীন, আমার পরে কোনো নবী নেই।’ -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৪৯; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২২১৯

নবুওতের মিথ্যা দাবিদারদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা হবে কাযযাবচরম মিথ্যাবাদী এবং দাজ্জালমহা প্রতারক। মিথ্যাচার ও প্রতারণার মাধ্যমে এরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। ওদের জাল থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খতমে নবুওতের সুস্পষ্ট আকীদার উপর অটল অবিচল থাকা। এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা-তাবীলের শিকার না হওয়া।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতামুন নাবিয়ীন’-এর অর্থও পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে তিনি শেষ নবী, তার পরে কোনো নবী নেই।’ ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়েছে। পরবর্তীতে নবুওতের বহু মিথ্যা দাবিদারের আবির্ভাব ঘটেছে। আর এদের প্রধান বৈশিষ্ট্যই মিথ্যাচার ও প্রবঞ্চনা।

গোলাম আহমদ কাদিয়ানীরও  শুধু  দাবিসমূহের বিষয়েও যার সামান্য ধারণা আছে তার কাছেও স্পষ্ট তার এই বৈশিষ্ট্যটি। পরবর্তীতে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ও তাদের ধর্মমত প্রচারের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। প্রতারণা ও সত্য-গোপনই তাদের প্রধান কৌশল।

তারা জনসাধারণের মাঝে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনাকালে মির্যা কাদিয়ানীর অনেক দাবি ইচ্ছাকৃত গোপন করে থাকে। বিশেষভাবে তার নবুওত দাবি। কোনো সরলপ্রাণ মুসলমানের যদি গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দাবিসমূহ ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে পূর্বঅবগতি না থাকে, তাহলে তার প্রতারিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা আছে। এখানে শুধু কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এক.

তারা মির্যা কাদিয়ানীর নবওত দাবির বিষয়টা গোপন করতে চায়:

অথচ এটাই হচ্ছে কাদিয়ানী ধর্মবিশ্বাসের প্রধান ও মৌলিক বিষয়। সরাসরি মির্জার লিখিত বইপত্র থেকে কিছু কিছু উদ্ধৃতি তুলে দিচ্ছি। যে কেউ ঐ বইগুলো খুলে দেখতে পারেন। নিজের কাছে না থাকলে আমাদের কাছে এসেও দেখে যেতে পারেন। মির্যা কাদিয়ানীর সকল বইপত্র উর্দূ, আরবী বিংবা ফার্সীতে লেখা। তার কয়েকটিমাত্র বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে। যে বেইগুলো বাংলায় অনূদিত হয়েছে আমরা মূল উর্দু বা আরবীর পাশাপাশি বাংলা বইয়েরও পৃষ্ঠা নাম্বার দিব।

মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে,

* ‘...সত্য খোদা তিনি যিনি কাদিয়ানে তার রাসূল পাঠিয়েছেন।-দাফিউল বালা বাংলা পৃ. ১2 , রূহানী খাযাইন খন্ড ১৮, পৃ. ২৩১

* ‘আমি ঐ খোদার কসম খেয়ে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ, তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আমার নাম রেখেছেন নবী।-তাতিম্মা হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযাইন খ. ২২, পৃ. ৫০৩

* ‘ইতিমধ্যে আমি যখন প্রায় দেড়শ ভবিষ্যদ্বাণী খোদার নিকট থেকে পেয়ে তা স্বচক্ষে বাস্তবায়িত হতে দেখলাম তখন নিজের সম্পর্কে নবী-রাসূল নাম কীভাবে অস্বীকার করতে পারি। আর যখন খোদা তাআলা আমার এই নাম রেখেছেন তখন কীভাবে আমি তা অস্বীকার করি কিংবা তিনি ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করি।-একটি ভুল সংশোধন পৃ.  এক গলতী কা ইযালা, রূহানী খাযায়েন খ. ১৮; পৃ. ২১০

* কয়েকদিন হ, এরূপ এক ব্যক্তির নিকটে কোন বিরুদ্ধবাদী আপত্তি জানায় যে, তুমি যার নিকট বয়াত (শিষ্যত্ব গ্র্রহণ) করেছো, তিনি নবী ও রসূল হবার দাবি করেছেন। এর উত্তর শুধু অস্বীকারজ্ঞাপক শব্দে দেয়া হয়েছিল। অথচ এরূপ উত্তর সঠিক নয়। সত্য কথা এই যে, আমার উপর অবতীর্ণ আল্লাহর পবিত্র ওহী (বাণী)সমূহে নবী, রসূল ও মুরসাল শ্রেণীর শব্দ একবার দুবার নয় শত শত বার বিদ্যমান রয়েছে। -একটি ভুল সংশোধন 3, এক গল্তী কা ইযালা, রূহানী খাযাইন খ. ১৮; পৃ. ২০৬

মির্জা কাদিয়ানী জীবনের শেষ পর্যন্ত নবুওতের দাবির উপরই ছিল এবং এ দাবির উপরই তার মৃত্যু হয়েছে। মির্জার ঐ পত্রটির সংশ্লিষ্ট অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হল যা ঠিক তার মৃত্যুর দিন আখবারে আমপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঐ পত্রে তার স্পষ্ট বক্তব্য-আমি খোদার আদেশ অনুযায়ী নবী। আমি যদি তা অস্বীকার করি তাহলে আমার পাপ হবে। আর খোদা যখন আমার নাম নবী রাখে, তখন আমি কীভাবে তা অস্বীকার করতে পারি? আমি এই দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া পর্যন্ত এরই উপর আছি। -আখবারে আম ২৬ মে ১৯০৮, মাজমুয়ায়ে ইশতেহারাত 2/725 নতুন সংস্করণ, হাকীকাতুন নুবুওয়াহ, মির্জা মাহমূদ পৃ. ২৭১; মুবাহাছা রাওয়ালপিন্ডি পৃ. ১৩৬, নবুওত ও খিলাফত 76। (এই চিঠি ২৩ মে ১৯০৮ সালে লেখা হয় এবং ২৬ মে আখবারে আমে প্রকাশিত হয়। একই দিন মির্জারও মৃত্যু হয়।)

দুই.

মির্জার নবুওত-দাবির বিষয়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ছল-চাতুরী:

এখানে এ বিষয়টি মনে রাখা দরকার যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজের সম্পর্কে অসংখ্য দাবি করেছে। মুজাদ্দিদ, মুহাদ্দাস, (ইলহামপ্রাপ্ত) মসীহ, মাহদী ইত্যাদি দাবির ধারাবাহিকতায় সবশেষে নবুওতের দাবিতে উপনীত হয়েছে। তার রচনাবলিতে সব ধরনের কথাই আছে। প্রথম দিকে সে নবুওত দাবিকে অস্বীকার করত এমনকি একে কুফর বলেও আখ্যায়িত করত। এজন্য মির্জার অনুসারীরা অনেক সময় সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য তার ঐ সময়ের বক্তব্য উদ্ধৃত করে থাকে, যাতে সে সরাসরি নবুওত দাবিকে কুফর বলেছে। কিন্তু তাদের এই প্রতারণা স্পষ্ট হবে যদি স্বয়ং মির্জার বক্তব্য সামনে থাকে।

জনৈক প্রশ্নকারী মির্জাকে প্রশ্ন করেছিল যে, ‘আপনার বক্তব্যের মাঝে তো বৈপরীত্য দেখা যায়। কোথাও নিজেকে নবী নয়বলেন, আবার কোথাও সকল বৈশিষ্ট্যে-মসীহের চেয়ে শ্রেষ্ঠঘোষণা করেন।এর জবাবে  এই বৈপরীত্যপূর্ণ দাবিসমূহের তাৎপর্যব্যাখ্যা করে মির্জা বলে,

“শোন, এই বৈপরীত্যের ধরন এমনই যেমন বারাহীনে আহমদিয়ায় লিখেছিলাম, মসীহ ইবনে মারইয়াম আসমান থেকে অবতরণ করবেন। কিন্তু পরে লিখেছি, ঐ মাসীহ আমি নিজেই। এই বৈপরীত্যের কারণ এটাই ছিল যে, যদিও খোদা তাআলা বারাহীনে আহমদিয়ায় আমার নাম রেখেছেন ঈসা এবং একথাও বলেছেন যে, তোমার আসার সংবাদ খোদা ও রাসূল দিয়েছেন, কিন্তু যেহেতু একদল মুসলমানের দৃঢ় বিশ্বাস এবং আমারও বিশ্বাস ছিল যে, হযরত ঈসা আসমানের উপর থেকে অবতরণ করবেন, একারণে আমি খোদার ওহীর বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করতে চাইনি; বরং এর ব্যাখ্যা করেছি এবং সাধারণ মুসলমানের বিশ্বাস যা ছিল আমি নিজের বিশ্বাসও তা-ই  রেখেছি। এবং একেই বারাহীনে আহমদিয়ায় প্রচার করেছি। কিন্তু পরে এ বিষয়ে বৃষ্টির মতো ওহী এল যে, ঐ প্রতিশ্রুত মাসীহ, যার আসার কথা ছিল, সে তো তুমিই। এরই সাথে শত শত নিদর্শন প্রকাশিত হল এবং আসমান যমীন আমাকে সত্য বলার জন্য দাড়িয়ে গেল। আর খোদার চমকাতে থাকা নিদর্শনসমূহ আমাকে বাধ্য করে এদিকে নিয়ে এল যে, আখেরী যমানায় যে মাসীহের আসার কথা সে তো আমিই। নতুবা আমার বিশ্বাস তো তা-ই ছিল যা বারাহীনে আহমদিয়ায় লিখেছি। ...তদ্রূপ প্রথম দিকে আমি এ আকীদাই পোষণ করতাম যে, মাসীহের সাথে আমার কী তুলনা? তিনি তো নবী এবং খোদার অন্যতম নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি। আমার মর্যাদার কোনো কিছু প্রকাশ পেলেও আমি তাকে আমার বিচ্ছিন্ন মর্যাদাই মনে করতাম, কিন্তু পরে যখন খোদা তাআলার ওহী আমার উপর বৃষ্টির মতো বর্ষিত হল তখন তা আমাকে এই আকীদার উপর থাকতে দিল না এবং পরিষ্কারভাবে আমাকে নবীখেতাব দেওয়া হল, কিন্তু এভাবে যে, একদিক থেকে নবী আরেকদিক থেকে উম্মতী...

আমি এই পাক ওহীর উপর সেভাবেই ঈমান আনি যেভাবে ইতিপূর্বে আমার উপর হওয়া  খোদার ওহীসমূহের উপর ঈমান আনি। ... আমি তো খোদা তাআলার ওহীরই অনুসারী। যতক্ষণ আমার তা জানা হয়নি আমি ঐ কথা বলেছি যা প্রথম দিকে বলেছিলাম আর যখন ঐ বিষয়ের ইলম হল তখন তার বিপরীত বললাম।’’ -হাকীকাতুল ওহী বাংলা 117-119, রূহানী খাযায়েন খ. ২২; পৃ. ১৫২-১৫৪

মির্জার জ্যেষ্ঠপুত্র মির্জা বশীরুদ্দীন মাহমূদের বক্তব্য:

‘‘সারকথা এই যে, হযরত মাসীহে মাওউদ (প্রতিশ্রুত মাসীহ) প্রথম দিকে যেহেতু নবীর সংজ্ঞা এই মনে করতেন যে, নবী সে-ই যে নতুন শরীয়ত আনে কিংবা কিছু বিধান রহিত করে কিংবা যে মাধ্যম ছাড়া সরাসরি নবী, একারণে নবীর সকল বৈশিষ্ট্য তার মাঝে বিদ্যমান থাকার পরও নবীনাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। যদিও তিনি ঐ সকল বৈশিষ্ট্যের দাবি করতেন, যা থাকলে কেউ নবী হয়ে যায়।

‘‘কিন্তু যেহেতু তিনি ঐসকল বৈশিষ্ট্যকে নবীর বৈশিষ্ট্য মনে করতেন না; বরং মুহাদ্দাস’ (ইলহামপ্রাপ্ত)-এর বৈশিষ্ট্য মনে করতেন এজন্য তিনি নিজেকে মুহাদ্দাসবলতেন। তার জানা ছিল না যে, আমার দাবির অবস্থা তো এই যে, তা নবীরা ছাড়া অন্যদের মধ্যে পাওয়া যায় না, অথচ আমি নবী হওয়া অস্বীকার করছি! কিন্তু যখন তিনি জানতে পারলেন, দাবির যে বিবরণ তিনি প্রথম থেকে দিয়ে আসছেন তা তো মুহাদ্দাস’-এর বৈশিষ্ট্য নয়, নবুওতের বৈশিষ্ট্য, তখন নবী হওয়ার কথা ঘোষণা করলেন।’’ -হাকীকাতুন নুবুওয়াহ, আনোয়ারুল উলুম 2/447-448

মির্জা কাদিয়ানী ও তার পুত্রের বক্তব্য এতই স্পষ্ট যে, কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। এ ধরনের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার উপস্থিতিতে কেউ যদি মির্জার ঐ সময়ের বক্তব্য উপস্থিত করে যখন সে তার নবী-দাবি অস্বীকার করত তাহলে তা হবে ঐ প্রতারণারই দৃষ্টান্ত, যা এই ধর্মমতের মূল উপাদান।

তিন.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে মির্জা কাদিয়ানীর ভক্তিমূলক বক্তব্যসমূহের স্বরূপ:

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী নবুওতের মিথ্যা দাবিদারদের প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রতারণা ও মিথ্যাচার। এরই একটি উদাহরণ এই যে, এরা নিজেদেরকে মুসলমান বলে প্রকাশ করে এবং ইসলামের কালেমা পাঠ করে, এমনকি নিজেদেরকে আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীবলেও দাবি করে।

তারীখে তবারীতে কুখ্যাত মিথ্যুক মুসায়লামাতুল কাযযাব সম্পর্কেও এ তথ্য আছে যে, সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে আযান দিত এবং ঐ আযানে এই সাক্ষ্য থাকত যে, হযরত মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল। তার মুয়াযযিনের নাম ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে নাওয়াহা। আর ইকামত দিত হুজাইর ইবনে উমাইর। দ্র. তারীখে তবারী ৩/২৪৪

তারা নিজেদের মূল আকীদা-বিশ্বাস গোপন রেখে মির্যা কাদিয়ানীর প্রথমদিকের বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকে। মির্যা কাদিয়ানীর এ বক্তব্য তারা পেশ করে:

“আমাদের ধর্ম বিশ্বাসের সারাংশ ও সারমর্ম হলো : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এ পার্থিব জীবনে আমরা যা বিশ্বাস করি এবং আল্লাহ তালার কৃপায় ও তাঁরই প্রদত্ত তৌফিকে যা নিয়ে আমরা এ নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করবো তা হলো, আমাদের সম্মানিত নেতা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হলেন, ‘খাতামান নাবীঈনখায়রুল মুরসালীন’-যাঁর মাধ্যমে ধর্ম পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং যে নেয়ামত দ্বারা সত্যপথ অবলম্বন করে মানুষ আল্লহ্ তালা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে তা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস রাখি, কুরআন শরীফ শেষ ঐশী-গ্রন্থ এবং এর শিক্ষা, বিধান, আদেশ ও নিষেধের মাঝে এক বিন্দু বা কণা পরিমাণ সংযোজনও হতে পারে না বিয়োজনও হতে পারে না। এখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কোনো ওহী বা ইলহাম হতে পারে না-যা কুরআন শরীফের আদেশাবলীকে সংশোধন বা রহিত কিংবা কোন একটি আদেশকেও পরিবর্তন করতে পারে। কেউ যদি এমন মনে করে তবে আমাদের মতে সে ব্যক্তি বিশ্বাসীদের জামাত বহির্ভূত, ধর্মত্যাগী ও কাফির। আমরা আরও বিশ্বাস করি, সিরাতে মুস্তাকীমের উচ্চমার্গে উপনীত হওয়া তো দূরের কথা, কোনো মানুষ আমাদের নবী (সা.)-এর অনুসরণ ছাড়া এর সামান্য পরিমাণও অর্জন করতে পারে না। আমরা আমাদের নবী (সা.)-এর সত্যিকার ও পূর্ণ অনুসরণ ছাড়া কোনো ধরনের আধ্যাত্মিক সম্মান ও উৎকর্ষ কিংবা মর্যাদা ও নৈকট্য লাভ করতে পারি না।’’ -ইযালায়ে আওহাম, রূহানী খাযায়েন 3/167-170

মির্যা কাদিয়ানীর রচনাবলি পড়া না থাকলে এবং কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নিজস্ব পরিভাষা সম্পর্কে অবগত না থাকলে এই উদ্ধৃতি থেকে কারো মনে হতে পারে, মির্জা তো আল্লাহর রাসূলকে মানে, এমনকি তাকে খাতামুন্নাবিয়ীনবলেও স্বীকার করে, কুরআনকে শেষ আসমানী গ্রন্থ  মানে এবং তাতে কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজন-পরিবর্তন ও রহিতকরণ হতে পারে না বলেও বিশ্বাস করে, এমনকি এর বিপরীত আকীদা পোষণকারীদের কাফিরও মনে করে। এ-ই যদি হয় তাদের ধর্মবিশ্বাস তাহলে মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের সাথে তাদের কী পার্থক্য?

আল্লামা ইকবাল সরলপ্রাণ মুসলিমের জন্যই বলেছিলেন- আমাদের সমাজের সারল্যও দেখ আর শত্রুর নির্লজ্জতাও দেখ।

খাতামুননাবিয়্যীন অর্থে বিকৃতি:

খতমে নবুওতের অথ ও মর্মের বিকৃতি করে মির্জা কাদিয়ানী লিখেছে:

“আল্লাহ জাল্লা শানুহু হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাতাম ওয়ালাবানিয়েছেন, অর্থাৎ গুণ ও  বৈশিষ্ট্য প্রবাহিত করার জন্য তাঁকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি  মোহর দেওয়া হয়েছে, যা আর কোনো নবীকে কক্ষনোই দেওয়া হয়নি। একারণেই তার নাম খাতামুন নাবিয়ীন স্থির হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর অনুসরণ নবুওতের গুণসমূহ দান করে আর তার রূহানী তাওয়াজজুহ নবী সৃষ্টি করে। এই পবিত্র শক্তি আর কোনো নবী লাভ করেননি। -হাকীকাতুল ওয়াহী, (বাংলা) 75, রূহানী খাযায়েন 22/100

একজন সাধারণ বোধসম্পন্ন পাঠকও বুঝতে পারছেন, এ হচ্ছে পরম ভক্তির আবরণে খাতামুন নাবিয়ীন’-এর অর্থকেই সম্পূর্ণ বিকৃত করে দেওয়া এবং নতুন নবুওত দাবির পথ থেকে বাধা সরানো। মির্জা কাদিয়ানীর কাছে খাতামুন নাবিয়ীনঅর্থ, যিনি রূহানী তাওয়াজজুহের মাধ্যমে অন্যকে নবী বানান। অতএব খাতামুন নাবিয়্যীনের পরেও নবী হতে পারে বরং হতেই হবে। (নাউযুবিল্লাহ) অথচ স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার ভাষায় খাতামুন নাবিয়ীন’-এর ব্যাখ্যা করে গেছেন যে, ‘আমার পরে কোনো নবী নেই।

মির্জা বশীরুদ্দীন মাহমুদের বক্তব্য শুনুন :

‘‘যদি আমার গর্দানের দুই পাশে তলোয়ারও ধরা হয় এবং আমাকে বলা হয় যে, বল, আঁহযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে কোনো নবী আসবে না তাহলে আমি বলব, তুমি মিথ্যাবাদী; চরম মিথ্যাবাদী, তাঁর পরে নবী আসতে পারে এবং অবশ্যই আসতে পারে।’’ -আনওয়ারে খিলাফত পৃ. ৬৫,

 

যিল্লী ও বুরুযী নবীর অভিনব দর্শন

মির্জা কাদিয়ানী তার নবুওতের দাবিকে মসৃণ করার জন্য এই অভিনব ব্যাখ্যারও আশ্রয় নিয়েছে যে, সে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই বহিঃপ্রকাশ (নাউযুবিল্লাহ) এই দাবির জন্য যিল্লি নবী’, ‘বুরুযী নবীর মতো অভিনব পরিভাষার ধোঁয়াশাও সৃষ্টি করেছে। অথচ তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের একজন ছাত্রও বলবে, এ সরাসরি হিন্দুদের  অবতারবাদ ইসলামে এর কোনো স্থান নেই।

মির্জার সুস্পষ্ট বক্তব্য :

‘‘এবং আঁহযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের আমি পূর্ণাঙ্গতম প্রকাশস্থল অর্থাৎ জিল্লী বা ছায়ারূপে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আহমদ। -হাকীকাতুল ওহী বাংলা টীকা 62, রূহানী খাযায়েন ২২/76

তার পূর্ণ বক্তব্য এই,

এই ওহীতে খোদা আমার নাম রুসুল (রাসূল শব্দের বহুবচন) রেখেছেন। কারণ- যেমনটা বারাহীনে আহমদিয়ায় লেখা হয়েছে-খোদা তাআলা আমাকে স

কল নবীর প্রকাশস্থলসাব্যস্ত করেছেন এবং সকল নবীর নাম আমার দিকে সম্বন্ধ করেছেন আমি আদম, আমি শীছ, আমি নূহ, আমি ইবরাহীম, আমি ইউসুফ, আমি মূসা, আমি দাউদ, আমি ঈসা, এবং আঁহযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের আমি পূর্ণাঙ্গতম প্রকাশস্থল অর্থাৎ যিল্লীভাবে মুহাম্মাদ সা.ও আহমদ সা.’--হাকীকাতুল ওহী বাংলা টীকা 62, রূহানী খাযায়েন ২২/76

অন্যত্র লিখেছে,

‘‘আয়াত وآخرين منهم لما يلحقوا بهم   এর দাবি অনুযায়ী বুরুযী-ভাবে আমিই খাতামুল আম্বিয়া। খোদা আজ থেকে বিশ বছর আগে বারাহীনে আহমদিয়ায় আমার নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আহমদ রেখেছেন। এবং আমাকে আঁ হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুদ (অস্তিত্ব) সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং এভাবে আঁ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাতামুন্নাবিয়্যীন হওয়ার মাঝে আমার নবুওতের দ্বারা কোনো কম্পন আসে না। কারণ ছায়া তো কায়া থেকে আলাদা  হয় না। আর যেহেতু আমি যিল্লীভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুতরাং খাতামুন নাবিয়ীনের মোহর ভাঙ্গেনি। কারণ মুহাম্মাদ সা.-এর নবুওত মুহাম্মাদ সা. পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রইল, অর্থাৎ সর্বাবস্থায় মুহাম্মাদ সা. ই নবী রইলেন, অন্য কেউ নয়। অর্থাৎ আমি যেহেতু বুরুযীভাবে মুহাম্মাদ সা. এবং বুরুযীভাবে নবুওতে মুহাম্মাদীসহ সকল মুহাম্মাদী গুণ ও বৈশিষ্ট্য আমার জিল্লিয়তের আয়নায় প্রতিবিম্বিত তাহলে এখানে আলাদা কোনো ব্যক্তি কোথায়, যে আলাদা নবুওতের দাবি করেছে?’’ -একটি ভুল সংশোধন 10, এক গালতী কা ইযালা, রূহানী খাযায়েন ১৮/২১২

এই বাক্যগুলো উদ্ধৃত করতেও বুক কেঁপে উঠে। তবু তা এজন্যই উদ্ধৃত করতে হচ্ছে যাতে তাদের পরিভাষার অর্থ ও মর্ম  পরিষ্কার হয় এবং নবী-ভক্তির অন্তরালে এরা যে খতমে নবুওতের অকাট্য ও সুস্পষ্ট আকীদাকেই অস্বীকার করে তা বুঝতে অসুবিধা না হয়।

যিল্লী ও বুরূযীশব্দের ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে মির্জা কাদিয়ানী যখন নবুওতে মুহাম্মাদী সমেত সকল মুহাম্মাদী গুণ ও বৈশিষ্ট্যনিজের মধ্যে টেনে নিল তখন আর খতমে নবুওতকে অস্বীকারের কী বাকী থাকে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

أنا خاتم النبيين، لا نبي بعدي.

 ‘‘আমি খাতামুন নাবিয়্যীন আমার পরে আর কোনো নবী নেই।’’

এই দ্ব্যর্থহীন ঘোষণায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের কল্পিত অবতারবাদের কোনোই অবকাশ নেই। এরপরও কেউ যদি ঐ অবকাশ বের করতে চায় তবে কালিমার প্রথম অংশ  لا إله إلا الله আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই-এতেও তো কোনো প্রতারক এমন কিছু মিথ্যা খোদারও অবকাশ বের করতে পারে যে সরাসরি মাবুদ নয়, শুধু আল্লাহনামের বিকাশ, প্রকাশ ও ছায়ামাত্র। (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)

জিহাদের কুরআনী বিধানের বিষয়ে মির্জা কাদিয়ানীর বক্তব্য

মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে,

‘‘জিহাদ অর্থাৎ দ্বীনী লড়াইয়ের প্রচন্ডতা খোদা তালা ধীরে ধীরে হ্রাস করেছেন। হযরত মূসা আ.-এর সময় এর তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, ঈমান আনাও হত্যা থেকে রক্ষা করতে পারত না এবং দুধের শিশুকেও কতল করা হত। এরপর আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের হত্যা করা হারাম করা হল, এরপর কোনো কোনো সম্প্রদায়ের জন্য ঈমানের স্থলে শুধু জিযয়া দ্বারা দায়মুক্তি গ্রহণ করা হল। আর প্রতিশ্রুত মসীহের সময় জিহাদের বিধান সম্পূর্ণরূপে স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। -আরবায়ীন, রূহানী খাযায়েন খ. 1৭, পৃ. ৪৪৩

শুধু জিহাদের বিধানকে অস্বীকার করার দ্বারা কুরআন মজীদের কতগুলো আয়াতকে বাতিল করা হল! এরপর খতমে নবুওতের আয়াতসমূহের অপব্যাখ্যা ও বিকৃতি তো দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।

উল্লেখ্য, মূসা আ.-এর সময় জিহাদে মুমিন ও শিশুদের হত্যা করা হত-একথা যে সম্পূর্ণ অসত্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুমিন ও শিশুদের কি মূসা আ. হত্যা করতেন, না ফিরাউন?

বস্তুত এই সকল অপব্যাখ্যা হচ্ছে ঐ মিথ্যাচার ও প্রতারণারই বিভিন্ন উদাহরণ, যার ভবিষ্যদ্বাণী আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দশ বছর আগেই করে গেছেন।

মুসলিম উম্মাহ ও কাদিয়ানী সম্প্রদায় এক মিল্লাত নয়

চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করবেন যে, কোনো নবুওতের দাবিকে স্বীকারকারী ও অস্বীকারকারী দুই দল কখনো এক মিল্লাত হতে পারে না। একদলের উপাধি মুমিনঅন্য দলের কাফির

আল্লাহর সত্য নবী ও রাসূলগণের ক্ষেত্রে যেমন এটা বাস্তব, নবুওতের মিথ্যা দাবিদারদের ক্ষেত্রেও বাস্তব। তবে নবুওতের মিথ্যা দাবিদারদের ক্ষেত্রে মুমিন-কাফির শব্দ থেকে বিপরীত অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ তার দাবি স্বীকারকারী তার ধর্মে মুমিননামে পরিচিত হলেও বাস্তবে সে কাফির। আর তার দাবি অস্বীকারকারী ঐ ধর্মে কাফিরহলেও বাস্তবে কাফির নয় যদি আল্লাহর শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান ও আনুগত্য থাকে। বাস্তবে সে মুমিন।

জাতি ও ধর্মের সুদীর্ঘ ইতিহাসও এই বাস্তবতার সাক্ষী। সুতরাং গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওতের দাবি স্বীকারকারী কাদিয়ানী সম্প্রদায় এবং অস্বীকারকারী মুসলিম উম্মাহকে এক ধর্ম ও মিল্লাতের অনুসারী মনে করা শুধু কুরআন ও সুন্নাহরই পরিপন্থী নয় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের আকীদারও বিরোধী।

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ থেকেই সুস্পষ্ট যে, ইসলাম ও কাদিয়ানী ধর্ম্ এক নয়। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দাবিসমূহ যারা স্বীকার করে না তারা তাদের কাফিরও ইসলামের গন্ডি থেকে খারিজবলেই বিশ্বাস করে। কিছু উদ্ধৃতি লক্ষ করুন

মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে,

আল্লাহ তায়ালা আমাকে জানিয়েছেন, যে ব্যক্তির কাছে আমার দাওয়াত পৌছলো আর সে আমাকে গ্রহন করলোনা (আমার দাবি মানলোনা) সে মুসলমান নয়।” -তাযকিরাহ-৫১৯, চতূর্থ সংস্করণ

আরও লিখেছে,

এখন বিষয়টা পরিস্কার। আমার এই ইলহাম  সমুহে বারবার একথা বলা হয়েছে, ইনি খোদার পক্ষ থেকে প্রেরিত, খোদার পক্ষ থেকে আদিষ্ট, তার বিশ্বস্ত ও তারই পক্ষ থেকে এসেছেন। তিনি যা কিছুই বলেন তার উপর তোমরা ঈমান নিয়ে আস। তার দুশমন  জাহান্নামী।-দাওয়াতে কওমরূহানী খাযায়েন১১/৬২

দ্বিতীয় খলীফাখ্যাত মির্জা মাহমূদ আহমদের ঘোষণা

আমাদের জন্য ফরয যে, আমরা গায়ের আহমদীকে মুসলমান মনে করব না এবং এদের পিছনে নামায পড়ব না। কারণ আমাদের নিকটে তারা খোদা তালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী। এটা ধর্মের বিষয়। এতে কারো নিজের এখতিয়ার নেই যে, কিছু করে।” -আনওয়ারে খেলাফত-৯০, আনোয়ারুল উলূম ৩/১৪৮

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মেঝো পুত্র মির্জা বশীর আহমদ এম.এ-এর বক্তব্য

‘‘এমন যে কোনো লোক, যে মুসা আ.কে মানে কিন্তু ঈসা আ.কে মানে না কিংবা ঈসা আ.কে মানে কিন্তু মুহাম্মাদ সা.কে মানে না অথবা মুহাম্মাদ সা.কে মানে কিন্তু প্রতিশ্রুত মাসীহকে মানে না সে শুধু কাফির নয়, পাক্কা কাফির এবং ইসলামের গন্ডি থেকে খারিজ।’’ -কালিমাতুল ফসল পৃ. 20

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বা তার অনুসারীদের কারো লেখায় কোথাও কোথাও বিরোধীদের জন্য মুসলমানশব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এই প্রয়োগের স্বরূপ বর্ণনা করে মির্যাপুত্র বশীর আহমাদ এম এ লিখেছে:

‘‘তিনি তার অস্বীকারকারীদেরকে তাদের বাহ্যিক নামের কারণে কখনো কখনো মুসলমানলিখেছেন। কারণ, তারা সেই নামে প্রসিদ্ধ।” –কালিমাতুল ফছল 38

মোটকথা, তাদের ধর্মগ্রন্থসমূহের বিবরণ ও সুস্পষ্ট বক্তব্যের দ্বারা পরিষ্কার যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মুসলমানদেরকে তাদের মিল্লাতভুক্ত মনে করে না। এটাই তাদের ধর্মবিশ্বাস। তাদের বিশ্বাস ও পরিভাষা অনুধাবন করে থাকলে তাদের প্রতারণা কিছুমাত্র অস্পষ্ট থাকবে না। ইসলাম বলতে তারা কোন্ ধর্মকে নির্দেশ করে, মুমিন-কাফির অর্থ তাদের কাছে কী, খাতামুন্নাবিয়্যীন অর্থ কী, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশের তাৎপর্য কী কিছুই অস্পষ্ট থাকবে না। এই সকল বিষয়ে পাঠক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুস্পষ্ট বাণী-

كذابون دجالون

 প্রচন্ড মিথ্যাবাদী, চরম প্রতারক’-এরই সত্যতা ও বাস্তবতা দেখতে পাবেন।

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতারণার একটি কৌশল এই যে, সরলপ্রাণ মুসলমানদের তারা বলে, ‘কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। সরাসরি আমাদের বইপত্র পড়ুন... ইত্যাদি।যেন তাদের ধর্মমত সম্পর্কে অলিমগণ যা বলেন সব অপপ্রচার। যেন তাদের বইপত্রে এসব নেই। অথচ আলিমগণ স্বয়ং গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইপত্র থেকে অসংখ্য উদ্ধৃতিসহযোগে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।

পূর্বে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওত দাবির বিষয়ে সরাসরি তার বইপত্র থেকেই উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছিল, যেগুলোতে তার নবুওত দাবি ও অন্যান্য কুফরী স্পষ্টভাষায় রয়েছে। তার অনেক বই বাংলাদেশের কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে অনুদিত হয়েছে এবং হচ্ছে। তাতে ঐ সকর কুফরী স্পষ্টভাষায় আছে। সুতরাং ঐ অনুরোধের প্রকৃত উদ্দেশ্য, মির্জা কাদিয়ানীর কুফরী বর্ণনায় পরিপূর্ণ ঐসব বইপত্রের অধ্যয়নে সাধারণ মুসলিমদের লিপ্ত করা। এদের এই প্রতারণার বিষয়ে সাবধান থাকা অপরিহার্য।

গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর একটি বইয়ের নাম এক গলতী কা ইযালা এটি একটি ভুল সংশোধননামে অনুদিত হয়েছে। ভিতরের প্রচ্ছদে অনুবাদকের নাম দেওয়া হয়েছে এভাবে-বঙ্গানুবাদ : মৌলভী মোহাম্মাদ।

পরের পৃষ্ঠায় লেখা আছে-

প্রকাশনায় : আহমদীয় (সম্ভবত প্রুফের ভুল) মুসলিম জামাত বাংলাদেশ। ৪ বকশী বাজার রোড, ঢাকা-১২১১।

প্রকাশকাল : প্রথম উর্দূ সংস্করণ : ৫ নভেম্বর, ১৯০১ ঈসাব্দ

প্রথম বাংলা সংস্করণ :

ডিসেম্বর ১৯৬৪ ইং

দ্বিতীয় বাংলা সংস্করণ :

রজব : ১৪২২, আশ্বিন : ১৪০৮

অক্টোবর : ২০০১

মুদ্রণে : ইন্টারকম এসোসিয়েট্স

মতিঝিল, ঢাকা

এই পুস্তিকার নামই দেয়া হয়েছে একটি ভুল সংশোধন। কিন্তু কী সেই ভুল, যা সংশোধনের জন্য মির্জা সাহেবের এই রচনা? ভুলটি হচ্ছে, কিছু লোক, যারা হয়তো কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের স্বরূপ না জানার কারণে এ দলে যোগ দিয়েছিল, তাদেরকে যখন মুসলিমরা সাবধান করলেন যে, ঐ ব্যক্তি তো নবুওয়ত দাবি করে। তখন এই সরলপ্রাণ প্রতারিতরা জবাব দিয়েছেন, ‘না তিনি নবুওয়ত দাবি করেন না।এদের এই জবাবটিই হচ্ছে সেই ভুল’, যা সংশোধনের জন্য মির্জা সাহেব এই পুস্তিকা রচনা করেছেন। মির্জা সাহেবের নিজের ভাষায় :

‘‘আমার জামাতের কিছুলোক, যারা আমার পুস্তকাদি মনোযোগ সহকারে পড়ার সুযোগ পায় নি এবং জ্ঞাতব্য বিষয়সমূহ পূর্ণভাবে অবগত হবার জন্য যথেষ্ট সময় আমার সাহচর্যে থাকে নি, তারা আমার দাবী ও প্রমাণ সম্বন্ধে জানার স্বল্পতাবশতঃ কোন কোন ক্ষেত্রে বিরুদ্ধবাদীদের আপত্তি শুনে যে উত্তর দিয়ে বসেন, তা বাস্তব ঘটনার সম্পূর্ণ বিপরীত। ফলে সত্য পথে থেকেও তাদেরকে লজ্জা পেতে হয়। কয়েকদিন হ, এরূপ এক ব্যক্তির নিকটে কোন বিরুদ্ধবাদী আপত্তি জানায় যে, তুমি যার নিকট বয়াত (শিষ্যত্ব গ্রহণ) করেছো, তিনি নবী ও রাসূল হবার দাবী করেছেন। এর উত্তর শুধু অস্বীকার জ্ঞাপক শব্দে দেয়া হয়েছিল। অথচ এরূপ উত্তর সঠিক নয়। সত্য কথা এই যে, আমার প্রতি অবতীর্ণ আল্লাহর পবিত্র ওহী (বাণী)-সমূহে নবী, রসূল ও মুরসাল শ্রেণীর শব্দ একবার দুবার নয়, শত শত বার বিদ্যমান রয়েছে। অতঃপর (আমার) ওহীতে এসব নেই, তা বলা কীরূপে সত্য হতে পারে? পরমুত পূর্বের তুলনায় এসব শব্দ আরও স্পষ্ট ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

‘‘বাইশ বছর পূর্বে লিখিত আমার বারাহীনে আহমদীয়ানামক পুস্তকেও এসব শব্দের ব্যবহার কিছু কম হয় নি। এ পুস্তকে প্রকাশিত আল্লাহর ওহীগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে-

هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله

 ‘‘হুয়াল্লাযী আরসালা রসূলাহু বিলহুদা ওয়া দীনিল হাক্কে লিইউযহিরাহু আলাদ্দীনে কুল্লিহি’’ (বারাহীনে আহমদীয়া, ৪৯৮ পৃঃ দ্রষ্টব্য) এতে স্পষ্টভাবে আমাকে রসূল বলা হয়েছে। আবার,এরপর এ পুস্তকেই আমার সম্বন্ধে আল্লাহর এ ওহী আছে-

جري الله في حلل الأنبياء

 ‘‘জারিউল্লাহে ফি হুলালিল আম্বিয়া’’ অর্থাৎ - নবীগণের পোষাকে আল্লাহর রসূল। (বারাহীনে আহমদীয়া, ৫০৪ পৃঃ দ্রষ্টব্য) আবার এ পুস্তকেই উক্ত ওহীর সাথে আল্লাহর এ ওহী আছে-

محمد رسول الله، والذين معه أشداء على الكفار، رحماء بينهم.

 ‘‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহে ওয়াল্লাযীনা মাআহু আশিদ্দাউ আলাল কুফ্ফারে রুহামাউ বাইনাহুম।’’ এ ঐশী বাণীতে আমার নাম মুহাম্মদ রাখা হয়েছে এবং রসূলও। এ পুস্তকের ৫৭৭ পৃষ্ঠায় লিখিত আর একটি ওহী এই,

دنيا ميں ايك نذير ايا

 ‘‘দুনিয়া মে এক নযীর আয়া’’ অর্থাৎ পৃথিবীতে একজন নযীর’ (সতর্ককারী) এসেছেন। এ ওহীটির আর এক বর্ণনা আছে।

دنيا ميں ايك نبى ايا

 ‘‘দুনিয়া মে এক নবী আয়া’’ অর্থাৎ-পৃথিবীতে একজন নবী এসেছেন। এরূপে বারাহীনে আহমদীয়ায় আরও বহু স্থানে আমাকে রসূল বলে সম্বোধন করা হয়েছে।’’ (পৃষ্ঠা : ৩-৪)

এরপর এই মিথ্যা দাবি প্রমাণের জন্য গোটা পুস্তিকায় যেভাবে কুরআন মজীদের আয়াতসমূহের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং নানা অপযুক্তি ও অপকৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে তা উপলব্ধি করলে যে কেউ শিউরে উঠবেন। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি।

একই পুস্তিকার ৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-

‘‘অতএব স্মরণ রাখতে হবে যে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিবিম্বরূপে আমি নবী বা রসূল হওয়া অস্বীকার করি না। এ অর্থেই সহী মুসলিমেও প্রতিশ্রুত মসীহকে নবী বলা হয়েছে। আল্লাহ হতে যিনি গায়েবের সংবাদ পান, তাঁর নাম নবী না হলে কী নামে তাঁকে অভিহিত করা যাবে? যদি বল তাঁকে মুহাদ্দাসবলা উচিত তাহলে আমি বলতে চাই যে, কোন অভিধানেই তাহদীসেরঅর্থ গায়েবের সংবাদ দেয়া নয়; কিন্তু নবুওয়তের অর্থ গায়েবের সংবাদ দেয়া। নবী আরবী ও হিব্রু, উভয় ভাষার শব্দ। হিব্রুতে এ শব্দের উচ্চারণ নাবীএবং এটা নাবাধাতু হতে উৎপন্ন হয়েছে। এর অর্থ আল্লাহর নিকট হতে জেনে গায়েবের সংবাদ দেওয়া। নবীর জন্য শরীয়তদাতা হওয়ার শর্ত নেই। নবুওয়ত আল্লাহর অপার্থিব দান। এর দ্বারা গায়েবের সংবাদ ব্যক্ত হয়।

‘‘সুতরাং আমি যখন আজ পর্যন্ত খোদার নিকট হতে প্রায় দেড়শত ভবিষ্যদ্বাণী লাভ করে স্বচক্ষে পূর্ণ হতে দেখেছি তখন আমার নবী ও রসূল হওয়া আমি কীরূপে অস্বীকার করতে পারি? যখন স্বয়ং খোদাতাআলা আমাকে নবী ও রসূল আখ্যা দিয়েছেন, তখন আমি কীরূপে এটা প্রত্যাখ্যান করতে পারি এবং তাঁকে ছেড়ে অন্যকে ভয় করি?’’

আরো বলা হয়েছে-

‘‘কিন্তু আমার বক্তব্য এই যে,আঁ হযরত (সঃ)-এর পর, যিনি প্রকৃতপক্ষে খাতামান্নাবীঈন ছিলেন, আমাকে নবী ও রসূল নামে অভিহিত করলে কোন আপত্তির কথা নয় এবং এতে খাতামিয়্যতের মোহরও ভাঙ্গে না। কারণ আমি বার বার বলেছি যে-

وآخرين منهم لما يلحقوا بهم

আয়াতানুযায়ী আমি বুরুজীভাবে সেই খাতামুল আম্বিয়া এবং খোদা আজ হতে বিশ বছর পূর্বে বারাহীনে আহমদীয়া (নামক পুস্তকে) আমার নাম মুহাম্মদ (সঃ) ও আহমদ (সঃ) রেখেছেন এবং আমাকে আঁ হযরত (সঃ)-এরই সত্তা নির্ধারিত করেছেন। সুতরাং এভাবে আমার নবুওয়তের দ্বারা আঁ হযরত (সঃ)-এর খাতামুল আম্বিয়ার মর্যাদায় কোন ধাক্কা লাগে  নি। কারণ ছায়া আপন মূল সত্তা হতে পৃথক নয়। যেহেতু আমি প্রতিবিম্বস্বরূপ মুহাম্মদ (সঃ), সুতরাং এ প্রকারে খাতামান্নাবীঈনের মোহর ভাঙ্গে নি। কারণ মুহাম্মদ (সঃ)- এর নবুওয়ত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ আমি যখন বুরুজীভাবে আঁ হযরত (সঃ) এবং বুরুজী রঙ্গে সমস্ত মুহাম্মদী কামালাত মুহাম্মদী নবুওয়তসহ আমার প্রতিবিম্বের দর্পনে প্রতিফলিত হয়েছে, তখন স্বতন্ত্র ব্যক্তি কোথা হতে আসলেন, যিনি পৃথকভাবে নবুওয়তের দাবী করলেন।’’-পৃষ্ঠা : ১০

***

মির্জা কাদিয়ানীর আরেকটি পুস্তিকা ‘‘তাজাল্লিয়াতে ইলাহিয়া’’ এরও বাংলা অনুবাদ হয়েছে। অনুদিত পুস্তিকার প্রচ্ছদে লেখা আছে : তাজাল্লিয়াতে ইলাহিয়া বা ঐশী বিকাশ। নীচে লেখকের নাম। ভিতরে প্রকাশক, অনুবাদক, প্রকাশকাল ইত্যাদি দেওয়া আছে এভাবে :

‘‘প্রকাশক : মাহবুব হোসেন-

ন্যাশনাল সেক্রেটারী ইশায়াত

আহমদীয়া মুসলিম জামা, বাংলাদেশ

৪ বকশী বাজার রোড, ঢাকা-১২১১

ভাষান্তর : মৌলবী মোহাম্মদ

সাবেক ন্যাশনাল আমীর

আহমদীয়া মুসলিম জামা, বাংলাদেশ

প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ১৯৮২

(৪র্থ সংস্করণ), জুন ২০০৯

সংখ্যা : ২০০০ কপি

মুদ্রণে : বাড-ও-লিভস্

২১৭/এ, ফকিরেরপুল ১ম লেন

মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।

এই পুস্তিকার দু-একটি উদ্ধৃতি দেখুন :

‘‘কিন্তু প্রকৃত কথা হলো, নবী কখনও শাস্তি আনে না। বরং কোন জাতি শাস্তি লাভের উপযুক্ত হলে যুক্তি দ্বারা তাদের ধ্বংসের পথ হতে সৎপথে ফিরিয়ে আনার চূড়ান্ত চেষ্টা করার জন্য নবীর আবির্ভাব হয় এবং তাঁর প্রকাশ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। নবীর প্রকাশ না হলে কঠিন শাস্তি অবতীর্ণ হয় না। কুরআন শরিফে আল্লাহতায়ালা বলেছেন-

وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا

অর্থাৎ, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা রসুল প্রেরণ করি, ততক্ষণ কোন জাতিকে দন্ডিত করি না।’’ (১৭  : ১৫)

তবে একি হল যে, একদিকে মহামারীতে দেশ উজাড় হয়ে যাচ্ছে এবং অপরদিকে ভূমিকম্পের তান্ডবলীলাও পিছু ছাড়ছে না? হে মোহাচ্ছন্ন জগৎ! অনুসন্ধান কর! দেখ তোমাদের মধ্যেও নিশ্চয় কোথাও খোদার প্রেরিত পুরুষের আবির্ভাব হয়েছে-যাকে তোমরা অস্বীকার করছ।’’ (পৃষ্ঠা : ৬-৭)

আরো লেখা আছে,

এখন মুহাম্মদী নবুওয়াত ব্যতিরেকে অপর সমস্ত নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। নব বিধান নিয়ে কোন নবী আসতে পারেন না। কিন্তু বিধান (শরিয়ত) বিহীন নবী আসতে পারেন, যদি তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুগামী হন। এভাবে, আমি একাধারে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতী এবং নবী। আমার নবুওয়াত-অর্থাৎ ঐশীবাণী লাভ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াতের প্রতিবিম্বস্বরূপ। তাঁর নবুওয়াতকে বাদ দিয়ে আমার নবুওয়াতের কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা সেই মুহাম্মদী নবুওয়াত, যা আমার মধ্যে পূর্ণ বিকাশ লাভ করেছে।’’ (পৃষ্ঠা : ১৯)

এই কুফরী কথাগুলো ঐ পুস্তিকাতেই বোল্ড করা আছে। এ ধরনের বক্তব্য মির্জার রচনাবলিতে অজস্র। আর তা থাকাই তো স্বাভাবিক। কারণ এটাই তার ধর্মের মূল বিষয়। সুতরাং সাধারণ পাঠকের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, কেন এরা সরাসরি তাদের রচনাবলি পাঠ করতে সাধারণ মুসলমানদের আহবান করে।

আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

Related Post