মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক মুসলমানদেরকে কাফের আখ্যা দেয়া
মির্যা কতৃক মুসলমানদেরকে কাফের আখ্যা দেয়া
কাদিয়ানী সম্প্রদায় অভিযোগের সুরে বলে যে, আমরা নামায পড়ি, রোযা রাখি, কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করি এরপরও আমাদেরকে তোমরা কাফের বল কেন? তাদের অভিযোগমূলক বাচনভঙ্গির অন্তরালে রয়েছে ভিন্ন এক রূপ। যা অধিকাংশ মানুষের, এমনকি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের কোনো কোনো অনুসারীরও চোখের আড়ালে। তাদের এ অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাদের প্রতি একটি পাল্টা প্রশ্নের সৃষ্টি। তা হলো, তারা কি মুসলমানদেরকে মুসলমান মনে করে, নাকি মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যা নবুওত দাবি অস্বীকার করার কারণে কাফের মনে করে? তাদের অনেক সাধারণ অনুসারীদেরকে বলতে শুনেছি তারা ও তাদের জামাত (কাদিয়ানী) মুসলমানদেরকে মুসলমান মনে করে। মির্যা কাদিয়ানীকে অস্বীকার করার কারণে কাফের মনে করে না।
তবে বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ও তার অনুসারীদের অন্যতম আকীদাই হলো, যে ব্যক্তি মির্যা কাদিয়ানীর দাবিসমূহ গ্রহণ করলো না সে নিঃসন্দেহে কাফের ও জাহান্নামী। তাকে সালাম দেওয়া যাবেনা, তার পিছনে নামায পড়া যাবেনা, তার জানাযা পড়া যাবে না, এমনকি তার কোনো নাবালেগ সন্তান মৃত্যুবরণ করলেও জানাযা পড়া যাবে না।
এগুলো তাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া কোনো অপবাদ বা মিথ্যাচার নয়; বরং মির্যা কাদিয়ানী ও তার ‘খলীফা’দের স্পষ্ট ও জোরালো বক্তব্য দ্বারা এগুলো সুপ্রমাণিত। এরপরেও তারা সাধারন মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে তাদের এ আকীদার উপর ছাইঢাকা দিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টিতে ওলামায়ে কেরামকে বিদ্বিষ্ট করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাই আমরা মির্যা কাদিয়ানী ও তার খলীফা ও সন্তানের বক্তব্য উল্লেখ করে তাদের আসল রূপ জনসম্মুখে নিয়ে আসবো।
মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য:
মির্যা কাদিয়ানী বলেছে,
“আল্লাহ তায়ালা আমাকে জানিয়েছেন, যে ব্যক্তির কাছে আমার দাওয়াত পৌছলো আর সে আমাকে গ্রহন করলোনা (আমার দাবি মানলোনা) সে মুসলমান নয়।” -তাযকিরাহ-৫১৯, চতূর্থ সংস্করণ
‘তার দুশমন জাহান্নামী’
মির্যা কাদিয়ানী তার সকল দাবির প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছে এবং তার বিরোধিতাকারী ও অস্বীকারকারীকে জাহান্নামী আখ্যা দিচ্ছে। তার দাবি, আল্লাহ তায়ালা তাকে বলেছে,
“যে ব্যক্তি তোমার অনুসরণ করবে না এবং তোমার হাতে বায়আত গ্রহণে অংশ নিবে না ও তোমার বিরোধী থাকবে সে খোদা ও তার রাসূলের নাফরমান ও জাহান্নামী।” -তাযকিরা, পৃ ৩৩৬ তৃতীয় সংস্করণ, ২৮০ চতূর্থ সংস্করণ
অন্য এক জায়গায় মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে,
“এখন বিষয়টা পরিস্কার। আমার এই ইলহাম সমুহে বারবার একথা বলা হয়েছে, ইনি খোদার পক্ষ থেকে প্রেরিত, খোদার পক্ষ থেকে আদিষ্ট, তার বিশ্বস্ত ও তারই পক্ষ থেকে এসেছেন। তিনি যা কিছুই বলেন তার উপর তোমরা ঈমান নিয়ে আস। তার দুশমন জাহান্নামী।” -দাওয়াতে কওম, রূহানী খাযায়েন১১/৬২
‘আমার দুশমন ইয়াহুদী খৃষ্টান মুশরিক’
মির্যা কাদিয়ানীর বলেছে, তার দুশমন ও বিরোধীদেরকে আল্লাহ তায়ালা ইহুদী, খৃষ্টান ও মুশরিক বলেছেন। মির্যার বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলো,
“আর যারা আমার বিরোধী তাদেরকে ইহুদী খৃষ্টান ও মুশরিক নামে অবিহিত করা হয়েছে। -নুযুলুল মাসীহ,রূহানী খাযায়েন, ১৮/৩৮২
মির্যা কাদিয়ানীর ফতোয়া: মুসলমানদের ইমামতিতে নামায হবে না
যারা মির্যা কাদিয়ানীকে অস্বীকার করে তাদের ইমামতিতে নামাজ নিষিদ্ধ- এমনকি যারা তার সত্যতায় সন্দেহ করে তাদের পেছনেও নামাজ নিষিদ্ধ- এ মর্মে সে তার অনুসারীদেরকে আদেশ দিয়ে বলছে,
“আল্লাহ তায়ালা আমাকে জানিয়েছেন, এমন লোকদের পেছনে তোমাদের নামায পড়া হারাম এবং নিঃসন্দেহে হারাম যারা আমাকে কাফের বলেছে বা আমাকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়েছে অথবা আমার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছে। অতএব তোমাদের ইমাম তোমাদেরই কোন এক ব্যক্তি হবে।” –আরবাঈন, রূহানী খাযায়েন-১৭/৪১৭, তাযকিরাহ-৩১৮
মির্যা কাদিয়ানীর এ নিষেধাজ্ঞার ফলে কাদিয়ানী ধর্মের কোনো অনুসারী মুসলমানদের পেছনে নামায পড়ে না। ধর্মীয় এ বিধান না জানার কারণে তাদের কেউ যদি মুসলমানদের পেছনে নামায পড়ে তাহলে তা ভিন্ন বিষয়।
কাদিয়ানী ধর্মের দ্বিতীয় খলীফা, মির্যা কাদিয়ানীর বড় ছেলে মির্যা মাহমুদ জোরালো ভাষায় হুশিয়ারী বক্তব্য দিয়ে গেছে যে,
“আমাদের জন্য ফরয হলো, আমরা যেন কোন অ-আহমাদীদেরকে মুসলমান মনে না করি, এবং তাদের পিছনে নামায না পড়ি। কেননা তারা খোদার এক নবীকে অস্বিকার করেছে।” -আনওয়ারে খেলাফত-৯০, আনোয়ারুল উলূম ৩/১৪৮
অন্য এক জায়গায় লিখেছে,
“হযরত মাসীহে মাওউদ কঠিনভাবে বলে দিয়েছেন যে, কোন অ-আহমদীদের পিছনে নামায পড়া জায়েয নেই। লোকেরা বারবার আমাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। আমার কথা হলো তোমরা আমাকে যতবার এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে আমি একই কথা তোমাদেরকে বলবো, অ-আহমদীদের পিছনে নামায পড়া জায়েয নেই জায়েয নেই জায়েয নেই।” -আনোয়ারে খেলাফত-৮৯, আনোয়ারুল উলূম-৩/১৪৭
একটি সংশয়ের নিরসন:
কাদিয়ানী সম্প্রদায় চরম জালিয়াতি ও শঠতার আশ্রয় নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে প্রচার করে থাকে যে, “মির্যা সাহেব কেবল ঐ সকল গাইরে আহমদীকে কাফের বলেছেন যারা প্রথমে তার উপর কুফুরীর ফতোয়া দিয়েছে। কারণ, তারা একজন মুসলমান (মির্যা কাদিয়ানী)-কে কাফের বলেছে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে কাফের বলে সে নিজেই কাফের হয়ে যায়। এ ভিত্তিতে মির্যা সাহেব কুফুরীর ফতোয়াবাজদেরকে কাফের বলেছেন। (!!) এছাড়া অন্যদেরকে তিনি ও তার খলীফাগণ কখনো কাফের বলেননি।”
উত্তর:
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের এটি চরম জালিয়াতি ও সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার নামান্তর। আদৌ তারা কোনো মুসলমানকে মুসলমান মনে করে না। এমনটি মনে করা তাদের ধর্মের মৌলিক আকীদা পরিপন্থী। যা কিছু পরেই আমরা আলোচনা করবো যে, মির্যা কাদিয়ানী তার এক মুরীদকে শুধু এই অপরাধে জামাত থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে যে, সে বিরোধীদেরকে মুসলমান মনে করতো।
দ্বিতীয়ত:
মির্যা কাদিয়ানী ও তার বড় ছেলের উপরিউক্ত বক্তব্যত্রয় থেকে পরিষ্কার প্রমাণিত হয় যে, মির্যা কাদিয়ানী ও তার পুত্র গাইরে আহমদী (মুসলমানদেরকে) এই কারণে কাফের বলেছে যে, তারা মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত এর উপর ঈমান আনেনি। মির্যা মাহমুদের ভাষায় “কেননা তারা খোদার এক নবীকে অস্বিকার করেছে।” মির্যা মাহমুদের এ বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে তার পিতার অস্বীকারকারীদের কাফের হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তার ‘নবুওত’ এর অস্বিকার।
তৃতীয়ত:
মির্যা কাদিয়ানী তার বক্তব্যে বলেছে, যারা তার সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান তাদের পেছনেও নামায পড়া নিষেধ। এখান থেকেও প্রমাণিত হয় ‘ওলামায়ে কেরামের কুফুরীর ফতোয়ার প্রেক্ষিতে মির্যা কাদিয়ানী গাইরে আহমাদীদেরকে কাফের বলেনি। বরং তার দাবি না মানার কারণেই সে বিরোধীদেরকে কাফের বলেছে।
কাদিয়ানী ধর্মের দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র বশীরুদ্দীন মাহমুদের বক্তব্য:
মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য ছিল, যার কাছে তার দাওয়াত পৌছার পরেও সে তাকে মানলো না সে কাফের।
পক্ষান্তরে মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ এর দাবি হলো, কারো কাছে মির্যা কাদিয়ানীর দাওয়াত না পৌছলেও সে কাফের বিবেচিত হবে।
মির্যা মাহমুদের বক্তব্য,
“হযরত মাসীহে মাওউদের হাতে বায়আত গ্রহন না করা সকল মুসলমান-ই কাফের। চাই তারা হযরত মাসীহে মাওউদের নাম না শোনার কারণেই হোকনা কেন, এরপরও তারা কাফের এবং ইসলামের গন্ডিবহির্ভুত।”-আয়েনায়ে সাদাকাত-৩৫. আনওয়ারুল উলূম-৬/১১০
মির্যা মাহমুদ আরও লিখেছে,
“হযরত মাসীহে মাওউদ কঠিনভাবে বলে দিয়েছেন যে, কোন অ-আহমদীদের পিছনে নামায পড়া জায়েয নেই। লোকেরা বারবার আমাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। আমার কথা হলো তোমরা আমাকে যতবার এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে আমি একই কথা তোমাদেরকে বলবো। অ-আহমদীদের পিছনে নামায পড়া জায়েয নেই জায়েয নেই জায়েয নেই।” -আনোয়ারে খেলাফত-৮৯,আনোয়ারুল উলূম-৩/১৪৭
সামনে লিখেছে,
“আমাদের জন্য ফরয হলো, আমরা যেন কোন অ-আহমাদীদেরকে মুসলমান মনে না করি, এবং তাদের পিছনে নামায না পড়ি। কেননা তারা খোদার এক নবীকে অস্বিকার করেছে।” -আনওয়ারে খেলাফত-৯০, আনোয়ারুল উলূম ৩/১৪৮
কাদিয়ানীদের দৃষ্টিতে মুসলমানদের জানাযা:
যেহেতু কাদিয়ানীদের নিকটে গাইরে আহমদী বা অকাদিয়ানীরা কাফের তাই তাদের জানাযা পড়াও হারাম মনে করে। মির্যাপুত্র বশীর আহমাদ এম এর বক্তব্যে:
“মাসীহে মাওউদ অ-আহমাদীদের সাথে ঠিক ঐ ধরণের আচরণ করেছেন যেমনটি রাসূল সা. খৃষ্টানদের সাথে করেছেন। তাদের সাথে আমাদের নামায আলাদা করে দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে আমাদের মেয়েদেরকে বিবাহ দেওয়া হারাম করা হয়েছে। তাদের জানাযা পড়তে বারণ করা হয়েছে। সুতরাং এখন তাদের সাথে মিলে-মিশে করার মত কিইবা কাজ এমন বাকি আছে?? -কালিমাতুল ফছল-৭৯
এমনকি কাদিয়ানীদের দৃষ্টিতে কোনো মুসলমানের নাবালেগ বাচ্চার জানাযাতেও শরীক হওয়া হারাম। মির্যা মাহমুদ লিখেছে,
“এখন একটা প্রশ্ন থেকে যায়। অ-আহমদীরাতো হযরত মাসীহে মাওউদকে অস্বিকার করেছে তাই তাদের জানাযা আমরা পড়বোনা। কিন্তু তাদের ছোট সন্তান মারা গেলে ওদের জানাযা কেন পড়বোনা? সে তো আর মাসীহে মাওউদকে কাফের বলেনি। প্রশ্নকারীকে আমি বলতে চাই যদি তোমার কথা সত্য হয় তাহলে হিন্দু বা খৃষ্টানদের বাচ্চাদের জানাযা কেন পড়না?... মোটকথা হলো অ-আহমদীদের সন্তানও অ-আহমদী। তাই তাদের সন্তানদের জানাযাও পড়া যাবেনা।” -আনোয়ারে খেলাফত, আনোয়ারুল উলূম-৩/১৫০
মির্যাপুত্র বশীর আহমাদ এম,এ এর বক্তব্য:
মির্যা কাদিয়ানীর মেজ ছেলে মির্যা বশীর আহমদ এম এ একটি পুস্তক রচনা করেছে লাহোরী গ্রুপের খন্ডনে। লাহোরী গ্রুপ কাদিয়ানীদের একটি উপদল বা শাখা। তাদের মাঝে ও এ দলের মূলধারার মাঝে আকীদাগত কিছু পার্থক্য আছে। তার মধ্যে একটি হলো, তারা মির্যা কাদিয়ানীর বিরোধীদেরকে কাফের মনে করে না। এদের সংখ্যা নিতান্ত কম। বাংলাদেশে এদের কোনো শাখা বা ব্যক্তি আছে বলে আমাদের জানা নেই। কাদিয়ানীদের দাবি, আমাদের দেশে এদের কোনো শাখা নেই। (নবুওত ও খিলাফত)। যাইহোক, মির্যা বশীর আহমাদ এমএ মির্যার অস্বীকারকারীকে কাফের না বলার এ ‘ভ্রান্ত’ আকীদার বিপক্ষে একটি পুস্তক রচনা করেছে ‘কালিমাতুল ফছল’ নামে। যেখানে এ বিষয়টা বিভিন্নভাবে স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছে যে, যারা মির্যা কাদিয়ানীর নবুওতের উপর ঈমান আনবে না তারা নিঃসন্দেহে কাফের। আমরা তার এ পুস্তক থেকে কিছু উদ্ধৃতি উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।
‘কাট্টা কাফের’
“যে ব্যক্তি মূসাকে মানে কিন্তু ঈসাকে মানেনা, অথবা ঈসাকে মানে কিন্তু মুহাম্মাদ সা. কে মানেনা, কিংবা মুহাম্মাদ সা. কে তো মানে কিন্তু মাসীহে মাওউদ (মির্যা কাদিয়ানী)-কে মানেনা, সে শুধু কাফেরই নয় বরং কাট্টা কাফের এবং ইসলামের গন্ডিবহির্ভুত।” -কালিমাতুল ফছল- ২০
‘আল্লাহর আদেশ’
মির্যা কাদিয়ানীর এক বক্তব্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মির্যা বশীর আহমদ এম এ বলেছে যে, মির্যার অস্বীকারকারীকে মুসলমান মনে না করা এবং তাদেরকে কাফের মনে করা এটা তার প্রতি আল্লাহ তায়ার আদেশ। লক্ষ করুন,
“মাসীহে মাওউদের উপরোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে অনেকগুলো বিষয়ের সমাধান হয়ে যায়। এক. হযরত সাহেব (মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী)-কে আল্লাহ তায়ালা ইলহামের মাধ্যমে অবগত করেছেন যে তোমার অস্বীকারকারী মুসলমান নয়। শুধু অবগতই করেননি, বরং এই আদেশ দিয়েছেন যে তুমি অ-আহমদীদেরকে মুসলমানই মনে করোনা।” -কালিমাতুল ফছল-৩৫
মুসলমানদের সাথে খৃষ্টান সদৃশ আচরণ
এই পুস্তকের অন্য স্থানে লিখেছে,
“মাসীহে মাওউদ অ-আহমাদীদের সাথে ঠিক ঐ ধরণের আচরণ করেছেন যেমনটি রাসূল সা. খৃষ্টানদের সাথে করেছেন। তাদের সাথে আমাদের নামায আলাদা করে দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে আমাদের মেয়েদেরকে বিবাহ দেওয়া হারাম করা হয়েছে। তাদের জানাযা পড়তে বারণ করা হয়েছে। সুতরাং এখন তাদের সাথে মিলে-মিশে করার মত কিইবা কাজ এমন বাকি আছে?? -কালিমাতুল ফছল-৭৯
‘এই যামানার ইহুদী’
মির্যা কাদিয়ানীর দাবি, সে এই উম্মতের জন্য ঈসা হয়ে প্রেরিত হয়েছে। যিনি পূর্বের হযরত ঈসা আ. হতে সর্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠ। (দাফেউল বালা ১৪) মির্যা বশীর আহমাদ এম এ বলেছে, মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে যারা অস্বীকার করে তারা ইহুদী জাতির মত। সে লিখেছে,
“বাস্তব সত্য হলো, যেহেতু এই ঈসা (মির্যা কাদিয়ানী) পূর্বের ঈসা থেকে সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠ এই জন্য এই যামানার ইহুদীদের কুফুরী নাসেরার মাসীহের অস্বীকারকারী (ইহুদীদের) কুফুরীর চেয়েও নিকৃষ্ট।” -কালিমাতুল ফছল ৫৫
‘মির্যার অস্বীকারকারী রাসূল সা. এর অস্বীকারকারী’
কাদিয়ানীদের আকীদা হলো, মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী হুবহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। (নাউযুবিল্লাহ) তাদের বিশ্বাস, রাসূল সা. দুইবার পৃথিবীতে আগমন করেছেন। একবার মক্কায় মুহাম্মাদের রূপ নিয়ে। দ্বিতীয়বার রাসূল সা. আগমন করেছেন পাঞ্জাব প্রদেশের কাদিয়ানে। তবে এবার তার আগমন হয়েছে মির্যা গোলাম আহমদের রূপে। ব্যক্তি মূলত একই। পার্থক্য শুধু শারিরিক অবকাঠামোর। এ কারণেই মির্যা বশীর আহমাদ এম এ বলেছে “সুতরাং এ বিষয়ে কোন ধরণের সন্দেহ থাকতে পারে না যে, আল্লাহ তায়ালা কাদিয়ানে পুনরায় মুহাম্মাদ সা. কেই পাঠিয়েছেন।” -কালিমাতুল ফছল ১৫। এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যাবে মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক লিখিত আরবাঈন, তোহফায়ে গোলড়িয়া, খুতুবাতে ইলহামিয়া পুস্তকগুলোতে।
যেহেতু তারা মির্যা কাদিয়ানীকে হুবহু মুহাম্মাদ সা. মনে করে। আর মুহাম্মাদ সা. এর অস্বীকারকারী সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। তাই তারা মির্যা কাদিয়ানীর অস্বীকারকারীকেও কাফের মনে করে। লক্ষ করুন,
“যদি নবী করিম সা. এর অস্বীকার কুফুরী হয় তাহলে মাসীহে মাওউদ (মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর অস্বীকারও কুফুরী হওয়া উচিৎ। কেননা, মাসীহে মাওউদ (মির্যা কাদিয়ানী) নবী করিম সা. থেকে আলাদা কোনো সত্ত্বা নন। বরং তিনিই তিনি। আর যদি মাসীহে মাওউদ (মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর) অস্বীকার কুফুরী না হয় তাহলে নাইযুবিল্লাহ রাসূল সা. এর অস্বীকার কুফুরী হবে না” -কালিমাতুল ফছল ৫৬-৫৭
প্রিয় পাঠক, মির্যা বশীর আহমাদের উপরিউক্ত বক্তব্যের কী ভয়াবহ অর্থ দাড়ায় আশা করি তা আপনারা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এর অর্থ কি এ নয় যে, যদি মির্যা কাদিয়ানীর অস্বীকারকারী মুসলমানদেরকে কাফের না বলা হয় তাহলে আবু জাহেল, আবু লাহাব, ওতবা, শাইবা প্রমুখরা কাফের নয়। (নাউযুবিল্লাহ) আর যদি আবু জাহেলদেরকে কাফের বলতে হয় তাহলে মির্যা কাদিয়ানীর অস্বীকারকারীদেরকেও কাফের বলতে হবে!!!
বিরোধীদেরকে মুসলমান মনে করার অপরাধে জামাত থেকে বহিষ্কার
মির্যা কাদিয়ানীর এক মুরীদ ছিল ডাক্তার আবদুল হাকীম খান। তার প্রতি মির্যার ছিল স্নেহ ও ভালোবাসা। সে কোরআনে কারীমের একটি তাফসীর লিখলে মির্যা কাদিয়ানী তার ভূয়োসী প্রশংসা করে। (কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত বদর পত্রিকা, ৯ অক্টোবর ১৯০৩)
তার একটি গুরুতর ‘অপরাধ’ ছিল সে মির্যা কাদিয়ানীর অস্বীকারকারীকে মুসলমান মনে করতো। তাদেরকে কাফের মানতে সে রাজি ছিল না। এ ‘অপরাধ’ ছিল মির্যার দৃষ্টিতে অমার্জনীয় ও ক্ষমার অযোগ্য। তাই এ অপরাধের কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কাদিয়ানী লেটারেচারে তাকে ‘মুরতাদ’ অভিহিত করা হয়। এ বিষয়ে মির্যা বশীর আহমাদ লিখেছে,
“হযরত সাহেব (তার এক মুরীদ) আব্দুল হাকীম খানকে জামাত থেকে শুধু এই কারণে বের করে দিয়েছেন যে, সে অ-আহমাদীদেরকে মুসলমান মনে করতো। -কালিমাতুল ফসল-৩৫
‘জঘন্ন আকীদা’
মির্যা বশীর আহমাদ মির্যা কাদিয়ানীর একটি ‘ইলহামী বাক্য’এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছে,
“মাসীহে মাওউদ (মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী)র অস্বীকারকারীকে মুসলমান মনে করার আকীদা একটি জঘন্ন আকীদা। -কালিমাতুল ফছল ৩৫
‘মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রাখো’
মির্যা কাদিয়ানীর কোনো এক মুরীদ তার মেয়েকে মুসলমানদের কাছে বিবাহ দিতে চেয়েছিল। তার প্রতি মির্যা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছে,
“হযরত মাসীহে মাওউদ ঐ ব্যক্তির উপর খুবই রাগ প্রকাশ করেছেন যে তার মেয়েকে একজন অ-আহমদীর কাছে বিবাহ দিয়েছিল। এক ব্যক্তি তার কাছে এই বিষয়ে বারবার জিজ্ঞাসা করলো এবং নানাধরণের ওযর পেশ করলো। কিন্তু তিনি বললেন, নিজ মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রাখ তবুও কোন অ-আহমদীর কাছে তাকে বিবাহ দিওনা। তার মৃত্যুর পরে ঐ ব্যক্তি নিজ কন্যাকে গাইরে আহমদীর কাছে বিবাহ দিয়ে দিল। তখন প্রথম খলীফা (হাকীম নূরুদ্দীন) তাকে আহমদীদের ইমামতি থেকে বরখাস্ত করে দিল এবং জামাত থেকে বহিষ্কার করে দিল। নিজের ছয় বছরের খেলাফতকালে তার তাওবা আর কবুল করেননি” -আনোয়ারে খেলাফত, আনোয়ারুল উলূম-৩/১৫১
এই যামানায় মুমিন হওয়ার মানদন্ড:
কাদিয়ানীদের আকীদা, এই যামানায় কোনো ব্যক্তির মুমিন ও মুসলমান হওয়ার জন্য শুধু রাসূল সা. এর উপর ঈমান আনা যথেষ্ট নয়। বর্তমান যামানায় মুমিন হওয়ার মানদÐ হলো মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর উপর ঈমান আনা। সুতরাং যে ব্যক্তি মির্যা কাদিয়ানীর উপর ঈমান আনবে সে মুমিন। আর যে তাকে অস্বীকার করবে বা তার উপর ঈমান না আনবে সে কাফের। আমরা এ বিষয়ের কতগুলো উদ্ধৃতি কোনো ধরণের মন্তব্য ও পর্যালোচনা ব্যতিত নিম্নে উল্লেখ করছি।
কাদিয়ানী ধর্মের প্রথম খলীফা হাকীম নূরুদ্দীন একটি প্রশ্নের উত্তরে বললো,
“একবার এক ব্যক্তি তাকে (হাকীম নুরুদ্দীনকে) জিজ্ঞাসা করলো মির্যা সাহেবকে না মানলে নাজাত পাওয়া যাবে কি না? উত্তরে তিনি বললেন, যদি আল্লাহ তায়ালার কথা সত্য হয় তাহলে বলবো মির্যা সাহেবকে না মানলে নাজাত পাওয়া যাবে না।” -কালিমাতুল ফছল ৩৯
হাকীম নূরুদ্দীনের উপরিউক্ত বক্তব্যের সূত্র ধরে মির্যা বশীর আহমাদ এম এ লাহোরী গ্রæপের আমীর মোহাম্মাদ আলী কে লক্ষ করে বলছে,
“যখন বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মাসীহে মাওউদ (মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী)কে মানা ব্যতিত নাজাত পাওয়া যাবে না তাহলে খামোখা অ-আহমদীদেরকে মুসলমান প্রমাণ করার বৃথা চেষ্টা কেন করা হচ্ছে!” -কালিমাতুল ফছল ৩৯
উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের লাহোরী গ্রুপ মির্যা কাদিয়ানীকে মাসীহ ও মাহদী মানা সত্বেও তার অস্বীকারকারীদেরকে কাফের আখ্যা দিত না।
মির্যা বশীর আহমাদ মির্যা কাদিয়ানীর একটি ‘ইলহাম’ উল্লেখ করে তার ব্যাখ্যা করেছে এভাবে,
“এই যামানায় আল্লাহ তায়ালা মাসীহে মাওউদ (মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী)-র উপর ঈমান আনাই মুমিন হওয়ার মানদন্ড আখ্যা দিয়েছেন।” -কালিমাতুল ফসল-৫২
এ পৃষ্ঠাতেই একটু সামনে গিয়ে লিখেছে,
“এ ইলহাম দ্বারাও স্পষ্ট বুঝে আসে, কোনো ব্যক্তি ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ সে মাসীহে মাওউদকে না মানবে।” -কালিমাতুল ফছল ৫২
এ পুস্তকের ৫৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে,
“এটা অতি স্পষ্ট কথা, যে বিষয়ের উপর নাজাত নির্ভরশীল হয় তা ঈমানের অংশ হয়ে থাকে। কেননা নাজাতের প্রথম শর্ত-ই হলো ঈমান। সুতরাং যদি মাসীহে মাওউদ (মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী)র উপর ঈমান আনা ঈমানের অংশ না হবে তাহলে মাসীহে মাওউদকে মানা ব্যতিত নাজাত পাওয়া যাবে না কেন?”
হাকীম নূরুদ্দীন কছম করে বলেছে,
“আমি আল্লাহ তায়ালার নামে কছম করে ঘোষণা দিচ্ছি যে, আমি মির্যা সাহেবের সকল দাবি মনেপ্রাণে মানি ও বিশ্বাস করি। আর তার (উদ্ভাবিত) আকীদা-বিশ্বাসকে নাজাতের জন্য নির্ভরশীল মনে করি।” -কালিমাতুল ফছল ৫৮
এই পুস্তকের ৫৯ নং পৃষ্ঠায় হাকীম নূরুদ্দীনের আরেকটি বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে। সে বলেছে,
“যদি আল্লাহ তায়ালার বাণী সত্য হয় তাহলে (আমি বলবো) মির্যা সাহেবকে মানা ব্যতিত নাজাত পাওয়া যাবে না”
Share
Tweet Whatsapp